পুষ্যমিত্র শুঙ্গের বিদ্রোহ কী ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতিক্রিয়া ছিল | History Honours
ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে ২৩২ খ্রি:পূ: সম্রাট অশোকের মৃত্যু হয়েছিল এবং পৌরাণিক সূত্র থেকে জানা যায় যে, শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথকে আনুমানিক ১৮৭ খ্রি:পূ: হত্যা করে তার ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ভারতে মৌর্য শাসনের অবসান ঘটান এবং শুঙ্গ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। অশোকের মৃত্যু ও মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের ব্যবধানের অল্পতার জন্য অনেকে সম্রাট অশোক ও তাঁর নীতিকে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেন। এজন্য পুষ্যমিত্র শুঙ্গের ব্রাহ্মণ্য প্রতিক্রিয়াকেই দায়ি করা হয়।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় দেখিয়েছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে সুযোগ সুবিধা ভোগকারী ব্রাহ্মণরা অশোকের আমলে সেগুলি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তার শাসনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন। যতদিন অশোক জীবিত ছিলেন ততদিন তারা বিপ্লবী বা কোনো সংহার মূর্তি ধারণ করেননি সত্য, তবে তাদের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ সর্বদা বিরাজমান ছিল। তাই অশোকের মৃত্যুর পর শক্তিশালী শাসকের অভাব দেখা দিলে এবং কেন্দ্ৰীয় শাসনের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়লে ব্রাহ্মণরা তার উত্তরসূরিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
শাস্ত্রী মহাশয় মনে করেন যে, ব্রাহ্মণরা চেয়েছিল এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যা তাঁদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করবে না। যাইহোক ব্রাহ্মণদের এই বিদ্রোহ প্রকাশ্য বিপ্লবের রূপ ধারণ করে এর কিছুকাল পর। আনুমানিক ১৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ নামে এক ব্রাহ্মণ শেষ মৌর্য শাসক বৃহদ্রথকে হত্যা করে মৌর্য বংশের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন।
ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী যুক্তি ও তথ্যের দ্বারা শাস্ত্রী মহাশয়ের মত খন্ড করেছেন।-
প্রথমতঃ বৌদ্ধ ও অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায় যে, অশোক ব্রাহ্মণদের বিশেষ মর্যাদা দান করতেন এবং যাতে তাদের কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য তিনি তাঁর কর্মচারীদের নির্দেশ দেন।
দ্বিতীয়তঃ অশোক জীবহত্যার নিষেধ সম্পর্কে যে নির্দেশ দেন, তা ব্রাহ্মণ বিরোধী ছিল না। অহিংসা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পরিপন্থী নয় এবং উপনিষদের মধ্যে অহিংসার কাহিনী লক্ষ্য করা যায়।
তৃতীয়তঃ ‘দন্ডসমতা’ ও ‘ব্যবহার সমতা’ প্রবর্তনের দ্বারা সম্রাট অশোক বিচারের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্রাহ্মণদের বিশেষ সুযোগ সুবিধার অবসান ঘটানোর চেষ্টা করেন নি।
সুতরাং, ‘ব্রাহ্মণদের প্রতিক্রিয়াই মৌর্যসাম্রাজ্যের পতনের কারণ’ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর এই যুক্তি' গ্রহণযোগ্য নয়। অশোকের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ এবং অহিংসার প্রতি আসক্তি মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের অন্যমত কারণ হলেও একমাত্র কারণ ছিল না। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের প্রকৃত কারন ছিল অশোকের উত্তরাধিকারীদের দুর্বলতা এবং প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা। ফলে একথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, পুষ্যমিত্র শুঙ্গের বিদ্রোহ ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতিক্রিয়া ছিল না।