বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও


বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন | স্বদেশী আন্দোলন | ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন

ভূমিকা: 
ভারতের বড়োলাট লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলা প্রেসিডেন্সিকে দুভাগে ভাগ করেন (১৯০৫ খ্রি., ১৯ জুলাই)। কার্জনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সারা বাংলাজুড়ে শুরু হয় যে প্রতিবাদী আন্দোলন তার নাম বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার দিনে সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধনের পরিকল্পনা নেন। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর পরামর্শে এই দিনটিতে সারা দেশে অরন্ধন পালিত হয়।


বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের ধারা: 
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন মূলত তিনটি ধারায় পরিচালিত হয়েছিল— ১. বয়কট, ২. স্বদেশি, ৩.  জাতীয় শিক্ষা।


বয়কট আন্দোলন: 
বয়কট আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবাসী ব্রিটিশের সঙ্গে সমস্ত ক্ষেত্রে অসহযোগিতা শুরু করে। এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল—


১. পত্রিকা ও সভাসমিতির ভূমিকা: 
কৃষ্ণকুমার মিত্রের সম্পাদনায় 'সঞ্জীবনী’ পত্রিকায় সর্বপ্রথম ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সর্বদিক থেকে বয়কটের কথা ঘোষিত হয়। এরপর কলকাতা, ঢাকা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জনসভায় ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। বলা হয়, ব্রিটিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে ভারতীয়রা ইস্তফা দেবেন এবং আগামী এক বছর জাতীয় শোক পালন করা হবে।


২. ছাত্র ও মহিলাদের ভূমিকা: 
বয়কট আন্দোলন সফল করার জন্য ছাত্রদের পাশাপাশি মহিলারাও এগিয়ে আসে। ছাত্ররা বিদেশি দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে পিকেটিং বা অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। বাংলার নারীসমাজ বিদেশি শাড়ি পরিধান ত্যাগ করে, কাচের চুড়ি পরা ছেড়ে দেয় এবং রান্নায় বিদেশি লবণের ব্যবহার বন্ধ করে। বিদেশি পণ্য, ভাষা, খেতাব সব কিছুই বয়কট করা হয়।


৩. মুসলিমদের ভূমিকা: 
হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টির জন্যই বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বহু শিক্ষিত মুসলমান হিন্দুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বয়কট আন্দোলনে যোগ দেন। একটি ইসলামিক পত্রিকায় মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক মনোভাব ত্যাগ করার কথা বলা হয়। বরিশাল, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মসজিদে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে নামাজ পাঠ এবং সমাবেশের আয়োজন করা হয়।


স্বদেশি আন্দোলন: স্বদেশি আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল—

১. শিল্পের বিকাশ: 
স্বদেশি মূলধনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাংক, জাহাজ কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি গড়ে উঠতে শুরু করে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস্’, ডা. নীলরতন সরকার প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় সাবান কারখানা, জামশেদজি টাটা প্রতিষ্ঠা করেন লৌহ-ইস্পাত কারখানা।


২. সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ: 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন প্রমুখের প্রচেষ্টায় রচিত হয় দেশাত্মবোধক সাহিত্য। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু প্রমুখের চেষ্টায় দেশীয় শিল্পচর্চার প্রসার ঘটে।


জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন: 
সরকারি বিরোধিতা উপেক্ষা করে ছাত্ররা এই আন্দোলনে শামিল হয়। 
১. পূর্ববঙ্গের রংপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় বিদ্যালয় (১৯০৫ খ্রি.)। 
২. জাতীয় শিক্ষায় অর্থ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন সুবোধচন্দ্র মল্লিক, জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, ড. রাসবিহারী বসু প্রমুখ। 
৩. সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে কলকাতায় গড়ে ওঠে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (১৯০৬ খ্রি.)। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় মহাবিদ্যালয় ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট। 
৪. বাংলা ছাড়িয়ে মুম্বাই, মাদ্রাজ, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে এই সময় জাতীয় মহাবিদ্যালয় ।

তথ্য সূত্র:
ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×