সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান


 সমাজ ও নারী শিক্ষার প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান/ভূমিকা 


ভূমিকা:

বাংলা তথা ভারতবর্ষে একাধিক ব্যক্তি তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। যাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখ্যযোগ্য ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন যে, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর না হলে সামাজিক উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। তাই তিনি সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে সামাজিক উন্নতি সাধনে নিজেকে নিয়োগ করেন।


সমাজসংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান


১. বিধবাবিবাহ প্রবর্তন: 

সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হল বিধবা-বিবাহ প্রবর্তন। সেসময়ে হিন্দুসমাজে কৌলীন্য প্রথা মেনে অল্পবয়সি মেয়েদের সঙ্গে বৃদ্ধ পুরুষের বিবাহ দেওয়া হত। ফলে অকালেই অনেক মেয়ে বিধবা হত। মেয়েদের বাল্যবৈধব্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য তিনি বিধবাবিবাহের সমর্থনে এক হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষর-সংবলিত এক আবেদনপত্র ভারতীয় আইনসভার সদস্যদের কাছে পাঠান। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে সেসময়কার ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি বিধবাবিবাহ আইন (১৮৫৬ খ্রি.) পাস করেন। তিনি নিজের পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামে এক বিধবার বিবাহ দিয়ে নজির সৃষ্টি করেন। দরিদ্র বিধবাদের সাহায্যের জন্য তিনি গঠন করেন ‘হিন্দু-ফ্যামিলি-অ্যানুইটি ফান্ড' (১৮৭২ খ্রি.)।


২. বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের বিরোধিতা: 

বিদ্যাসাগর বহুবিবাহের বিরোধিতা করে ৫০ হাজার মানুষের স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদপত্র পাঠান (১৮৫৫ খ্রি.) ব্রিটিশ সরকার-এর কাছে। ব্রিটিশ সরকার বহুবিবাহ বন্ধের জন্য এক কমিটি গঠন করে। কিন্তু এর দু-বছর পরেই মহাবিদ্রোহ ঘটে যাওয়ায় এ ব্যাপারে বিশেষ অগ্রগতি ঘটেনি। তিনি বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করে বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টার জন্যই ব্রিটিশ সরকার এক আইন পাস করায়, যাতে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমপক্ষে দশ বছর ধার্য করা হয়।


৩. অন্যান্য সমাজসংস্কার: 

বিদ্যাসাগর সে সময়কার সমাজে প্রচলিত গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রথা, কুষ্ঠরোগীকে হত্যার নিয়ম, জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি কৌলীন্য প্রথার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন।


নারী শিক্ষার প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অবদান:


১. নারী শিক্ষার প্রসার:

বিদ্যাসাগর উপলব্ধি করেছিলেন একমাত্র শিক্ষায় পারে নারীজাতিকে উন্নতির দিশা দেখাতে। তাই তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। এর জন্য তিনি বিভিন্ন বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। তিনি নিজ উদ্যোগে প্রায় ২০ টি মডেল স্কুল স্থাপন করেছিলেন। ১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেবের সহযোগিতায় তিনি হিন্দু ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।


২. সংস্কৃত কলেজে শিক্ষাদান:

সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালীন বিদ্যাসাগর নারীদের সংস্কৃত ও মাতৃভাষায় শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। এর জন্য তিনি ' উপক্রমণিকা ' এবং 'ব্যাকরণ কৌমুদী' নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। 


৩. বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা:

বিদ্যাসাগর নারী ও শিশু শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন 

পাঠ্যপুস্তক রচনাও করেছিলেন। ' বর্ণপরিচয় ', ' কথামালা ', ' শকুন্তলা ', 'সীতার বনবাস' প্রভৃতি গ্রন্থ তার কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে।


মূল্যায়ন:

ভারতবর্ষের সমাজ ও সংস্কৃতিতে বিদ্যাসাগরের অবদান ছিল চিরস্মরণীয়। তার চিন্তাধারা ও কর্মে পাশ্চাত্য চিন্তাধারার এক অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ করা যায়। এই কারণে ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী বিদ্যাসাগরকে "ঐতিহ্যবাহী আধুনিককার" বলে অভিহিত করেছেন।


তথ্য সূত্র:
ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×