বক্সারের যুদ্ধের কারণ | বক্সারের যুদ্ধের কারণ প্রেক্ষাপট | বক্সারের যুদ্ধের পটভূমি | বক্সারের যুদ্ধের প্রভাব বা তাৎপর্য
ভূমিকা:
ইংরেজদের সহায়তায় মীরকাশিম ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব হন। নবাব পদে বসেই স্বাধীনচেতা ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মীরকাশিম উপলব্ধি করেন, আর্থিক ও সামরিক বিভাগকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ইংরেজরা ভীত হয়ে পড়ে ও তাঁর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
মীরকাশিম সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষের কারণ/বক্সারের যুদ্ধের কারণ
১. আর্থিক সংস্কার:
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে মীরকাশিম— ১. জমিদারদের ওপর কয়েকটি বাড়তি কর চাপান ও উদ্ধত জমিদারদের কঠোর হাতে দমন করেন। ২. ভূমি রাজস্বের হার দেড় আনা বাড়ান। রাজস্ব আত্মসাৎকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে সমপরিমাণ রাজস্ব আদায় করেন। ৩. ইংরেজ মদতপুষ্ট বিহারের নায়েব দেওয়ান রামনারায়ণকে হত্যা করেন ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের বরখাস্ত করেন।
২. সামরিক সংস্কার:
মীরকাশিম সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে তোলার উদ্যোগ নেন। এই লক্ষ্যে ইউরোপীয় রণকৌশলে তিনি তাঁর সেনাদের শিক্ষিত করে তোলেন। তিনি জার্মান সেনাপতি মার্কার ও ফরাসি সেনাপতি সমরুকে নিয়োগ করেন। এ ছাড়াও তিনি মুঙ্গেরে কামান ও বন্দুক তৈরির একটি অস্ত্র কারখানা নির্মাণ করেন।
৩. শুল্ক বিবাদ:
মোগল সম্রাট ফারুকশিয়র এক ফরমান জারি করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার (দস্তক) দিয়েছিলেন। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত বাণিজ্যেও দস্তক বা ছাড়পত্র ব্যবহার শুরু করে। এর ফলে নবাব তাঁর প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হন এবং ভারতীয় বণিকগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এতে মীরকাশিম ক্ষুব্ধ হয়ে ভারতীয় বণিকদের ওপর থেকেও বাণিজ্যের শুল্ক তুলে নেন। মীরকাশিমের এই সিদ্ধান্তে ইংরেজরা রুষ্ট হলে, উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘটিত হয় বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪ খ্রি:, ২২ অক্টোবর)।
বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল/গুরুত্ব:
ভারতের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।
১. শাসক নির্ধারণে:
বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারতের ভবিষ্যৎ শাসক নির্ধারণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধজয়ের ফলেই বাংলা তথা ভারতে ইংরেজ কোম্পানির ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
২. উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তারে:
বক্সারের যুদ্ধে জয়ের পর ইংরেজ কোম্পানি উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তার করে। অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ্-দৌলা কোম্পানির অনুগত হয়ে পড়েন। দিল্লির মোগল বাদশা শাহ আলমও কোম্পানির দয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
৩. আর্থিক লুণ্ঠনে:
বক্সারের যুদ্ধে জিতে বাংলার বাণিজ্য অর্থনীতির ওপর ইংরেজ কোম্পানি একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করে। কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা বাংলার সম্পদ লুঠ করে ইংল্যান্ডে পাঠাতে শুরু করে। শুরু হয় আর্থিক লুণ্ঠন বা সম্পদের নির্গমন।
৪. দেওয়ানি লাভের ক্ষেত্র:
বক্সারের যুদ্ধে জেতার পর ইংরেজ কোম্পানি মোগল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে দেওয়ানি লাভ করে (১৭৬৫ খ্রি., ৩০ সেপ্টেম্বর)। কোম্পানি দেওয়ানি, রাজস্ব আদায় ও দেওয়ানি বিচারের দায়িত্বলাভের সূত্রে এক সার্বভৌম শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে।
তথ্য সূত্র:
ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।