প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা চিন্তা ও শান্তিনিকেতন ভাবনা | মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন | Class 10 History Suggestion


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন ভাবনা | রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা | শান্তিনিকেতনের শিক্ষা ব্যবস্থা | দশম শ্রেণী ইতিহাস সাজেশন পঞ্চম অধ্যায় বড় প্রশ্ন উত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন | WB Class 10 History Suggestion | WB Madhyamik History Suggestion


ভূমিকা: 

ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার কঠোর সমালোচক রবীন্দ্রনাথ বিকল্প শিক্ষাদর্শন প্রয়োগের পক্ষপাতী ছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। কিন্তু দীর্ঘকাল তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেননি 


প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তা:

১. জ্ঞান এবং বোধের সমন্বয়: 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেছিলেন ভারতীয় সভ্যতার শিকড় শহরে নয়, বনে। ভারতীয় তপস্বীরা এই সভ্যতাকে পুষ্ট করেছেন তাঁদের জ্ঞান এবং বোধের সমন্বয়ে। এই জ্ঞান হল মানুষকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে না দেখে বিশ্বপ্রকৃতির অংশ হিসেবে জানা। এই জানা কেবল বিজ্ঞানের জানা নয় বা কেবল বাইরে থেকে দেখে মানুষকে এই বিশ্বপ্রকৃতির অংশ বলে বোঝা নয়। বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে নিজের যোগের বোধকে মানুষের মনে জাগ্রত করা। 


২. প্রকৃতি ও মানুষের সংযোগস্থাপন: 

শান্তিনিকেতন, শ্রীনিকেতন, শিক্ষাসত্র বা বিশ্বভারতীর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলার সময় রবীন্দ্রনাথের মনে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগস্থাপনের এই আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছিল। সেই কারণেই তিনি তাঁর শিক্ষাভাবনার প্রয়োগের জন্য কলকাতার মতো বড়ো শহরের পরিবর্তে নির্জন গ্রামকেই বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলে বস্তুবাদী চিন্তার পরিমণ্ডলের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র মরুদ্যান বা দ্বীপের মতো অবস্থান বজায় রাখা শান্তিনিকেতনের পক্ষে দীর্ঘকাল সম্ভব ছিল না।


৪. শিক্ষাভাবনার প্রাসঙ্গিকতা: 

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার প্রাসঙ্গিকতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে প্রকৃতিকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিঢ় যোগসূত্র স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। মানুষ দীর্ঘকাল ধরে প্রকৃতিকে তার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগানদার বলে মনে করে আসছে। মাটি থেকে গাছ উপড়ে, কয়লা বা ধাতু তুলে আমরা তৈরি করছি বাসস্থান, প্রাসাদ আর মারণাস্ত্র। ইতিমধ্যেই পরিবেশ ও প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের দাবি। 

 

বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ- CLICK HERE


৫. বিকল্প শিক্ষার বিস্তার: 

১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ব্ৰষ্মচর্য বিদ্যালয় স্থাপন করে রবীন্দ্রনাথ বিকল্প শিক্ষাবিস্তারের কাজ শুরু করেন। শহরকেন্দ্রিক শিক্ষার বিরোধী রবীন্দ্রনাথ এই বিদ্যালয় স্থাপন করেন। প্রকৃতির মধ্যে তপোবন আশ্রিত প্রাচীন আশ্রমিক শিক্ষাব্যবস্থার ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার ইচ্ছা তাঁর মধ্যে ছিল। রবীন্দ্রনাথ জগদীশচন্দ্র বসুকে একটি চিঠিতে লেখেন— তিনি শান্তিনিকেতনে একটি বিদ্যালয় খুলতে চান যেখানে বিলাসিতা থাকবে না। ধনী, দরিদ্র কঠিন ব্রহ্মচর্যে দীক্ষিত হবে।


উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ যদি নিজেকে একটি বিচ্ছিন্ন স্বার্থপর জীব বলে ভাবে তাহলে তাকে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করা থেকে আটকানো সম্ভব নয়। মানুষ যে প্রকৃতির অংশ— এই বোধই তাকে প্রকৃতির এবং তার নিজের প্রতি যত্নশীল হতে শেখাবে। তাই রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আমাদের বিবেচনা করা দরকার।


তথ্য সূত্র: মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন (ড. পাহাড়ী)

Tallent Booster

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×