সম্রাট জাহাঙ্গীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পূজারী ছিলেন। প্রকৃতি-চিত্রন ছাড়াও তিনি ইসলামীয় প্রতিকৃতি অঙ্কনের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছেন। জাহাঙ্গীরের সময় আকবরের আমলে প্রতিকৃতি অঙ্কনের প্রথা আরো বেশি প্রচলিত হয়। সম্রাট স্বয়ং এইসব ছবি কে, কবে এঁকেছেন এবং কার ছবি আঁকা হয়েছে তার খুঁটিনাটি বিবরণ রাখতেন। প্রতিকৃতি অঙ্কনে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন মনোহর, ফারুক বেগ, বিষেন দাস প্রমুখ চিত্রবিদগণ।
মুঘল আমলের প্রথম দিকে পান্ডুলিপি অলংকরণের উপর গুরুত্ব দিয়ে যে চিত্ররীতির জন্ম হয়েছিল জাহাঙ্গীর সেই বন্ধন থেকে চিত্রাঙ্কন শিল্পকে মুক্ত করেন। তবে পান্ডুলিপি চিত্রনকে তিনি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করতে পারেননি। জাহাঙ্গীরের আমলে মুঘল প্রতিকৃতিতে 'তিন-চতুর্থাংশ মুখ চিত্রন' রীতি লুপ্ত হয় এবং 'অর্ধমুখ-চিত্রণ- রীতি' স্থান গ্রহণ করে।
এটি সম্পূর্ণ 'মুঘল চিত্রকলার ভারতীয়করণ' হিসেবে গণ্য হয়। সমসাময়িক উৎসব বা ঘটনাবলীর সাথে প্রতিকৃতি অঙ্কনের বহু নিদর্শন জাহাঙ্গীরের আমলে পাওয়া যায়। জাহাঙ্গীরের অভিষেক, হোলি, দেওয়ালি প্রভৃতি উৎসবের জনসমাবেশ ও শিকারের দৃশ্য প্রভৃতি বহু সমধর্মী চিত্র সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে।
জাহাঙ্গীরের আমলে মুঘল চিত্রশিল্পের আরেকটি অভিনবত্ব ফুটে ওঠে "পাড়- চিত্রন"- এর মধ্যে। সোমপ্রকাশ বর্মা লিখেছেন যে, আকবরের আমলে মূল ছবির সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত পাড় চিত্রনের রেওয়াজ ছিল। কিন্তু জাহাঙ্গীরের আমলে চিত্রকলার এক স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে "পাড়- চিত্রন" বিকাশ লাভ করে।
এইভাবে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মুঘল চিত্রশিল্পে এক অভিনবত্ব আসে। সম্রাট থাকাকালীন তিনি চিত্রকলার প্রতি যে আগ্রহ প্রদর্শন করেছিলেন তা আমৃত্যু অটুট ছিল। এই কারণে ঐতিহাসিকরা জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালকে "চিত্রকলার স্বর্ণযুগ" বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।
তথ্য সূত্র:
১. মুঘল-রাজ থেকে কোম্পানি রাজ- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ী।
২. মুঘল যুগ থেকে কোম্পানি আমল- সৌমিত্র শ্রীমানী।
৩. ভারতের ইতিহাস- মুঘল যুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণ- তেসলিম চৌধুরী।