অর্থশাস্ত্র হলো একটি রাষ্ট্রনীতিবিষয়ক গ্রন্থ। সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন কৌটিল্য- যিনি বিষ্ণুগুপ্ত এবং চানক্য নামেও পরিচিত ছিলেন। কৌটিল্য ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের অভিভাবক ও প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। যদিও অর্থশাস্ত্রের প্রকৃত রচয়িতা তিনি কিনা, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। এমনকি এই গ্রন্থটি কবে রচিত হয়েছিল তা নিয়েও ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন মন্তব্য ব্যাখ্যা করেছেন।
১৯০৫ সালে ড. শ্যামশাস্ত্রী অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি আবিষ্কার করেছিলেন। যা, থেকে ঐতিহ্যগত ধারণা অনুযায়ী অনুমান করা হয় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে এই গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল। কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রনীতিকে ধর্মশাস্ত্র ও নীতিশাস্ত্র থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে রাষ্ট্রনীতিকে "চূড়ান্ত বিজ্ঞান" বলে প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত কোনো জটিল সমস্যার সম্মুখীন হলে তার প্রকৃতি বিশ্লেষণ ও সমাধানের উপায় কৌটিল্য তার গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন।
কৌটিল্য পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে 'অর্থশাস্ত্রে' মন্ডল তত্ত্বে "শত্রুর শত্রুকে মিত্র" বলে ঘোষণা করেছেন এবং নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে 'স্বভাবজাত শত্রু' ও পরবর্তী রাষ্ট্রকে 'স্বভাবজাত মিত্র' বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থশাস্ত্র থেকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়। অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে মৌর্য যুগের জমি থেকে তিন প্রকার আয় হতো। যথা- সীতা, ভাগ ও বলি। এছাড়া মৌর্যযুগে যে দক্ষ ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল তার কথাও জানা যায়।
রাজনীতি ও শাসনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও অর্থশাস্ত্রে কৃষিব্যবস্থা, পূর্তবিদ্যা, ধাতুবিদ্যা, মণিরত্ন প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। কৌটিল্যের 'অর্থশাস্ত্র' আবিষ্কৃত হওয়ার পর মৌর্য যুগের বহু অজানা ইতিহাস উঠে এসেছে। আজ থেকে দুই সহস্রাব্দের আগে ভারতীয়দের রাষ্ট্রনীতি চেতনা কতটা উন্নত ছিল তা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে প্রকাশিত হয়। এই কারণে কৌটিল্যের কৃতিত্ব প্রশংসা করে অধ্যাপক আলতেকর বলেছেন যে, "কৌটিল্য শুধু একজন বিখ্যাত রাষ্ট্রনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি রাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারাও প্রবর্তন করেছিলেন"।
তথ্য সূত্র:
১. ভারতীয় সভ্যতার বিবর্তন | আজিজুল বিশ্বাস, মো: সরোয়ার জাহান, নারায়ণ নন্দী।
২. ইতিহাস পরিক্রমা- অধ্যাপক এস মল্লিক।
৩. ভরতবর্ষের ইতিহাস- প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগ - গোপালচন্দ্র সিনহা।