ইঙ্গ-ফরাসী যুদ্ধের ফলাফল | Results of the Anglo-French War

ইঙ্গ-ফরাসী যুদ্ধের ফলাফল

ইঙ্গ-ফরাসী যুদ্ধের ফলাফল | Results of the Anglo-French War


কর্ণাটকের তৃতীয় যুদ্ধ এবং ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দের প্যারিসের সন্ধি দ্বারা ভারতে প্রায় দুই দশক (১৭৪০-৬৩ খ্রিঃ) ধরে প্রচলিত ইঙ্গ-ফরাসী দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দের সন্ধি দ্বারা ফরাসীরা তাদের পণ্ডিচেরী, চন্দননগর ও অন্যান্য স্থানগুলি ফিরে পায়, কিন্তু স্থির হয় যে এই স্থানগুলি একমাত্র বাণিজ্য-কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহৃত হবে—কোনক্রমেই এই সব স্থানে দুর্গ নির্মাণ বা সেনা মোতায়েন করা চলবে না। এ সময় থেকে ফরাসীরা ভারতে ইংরেজ রক্ষণাধীনে একমাত্র বাণিজ্য করারই অধিকারী হয়। বলা বাহুল্য, এর ফলে ভারতে ফরাসী সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন চিরতরে বিলুপ্ত হয়।


ইঙ্গ-ফরাসী যুদ্ধ দেশীয় রাজন্যবর্গের সামরিক দুর্বলতা সকলের কাছে তুলে ধরে। সাম্রাজ্য গঠনে উদ্যোগী হয়। ইংরেজরা সহজেই উপলব্ধি করে যে, ভারতীয় রাজন্যবর্গের মধ্যে দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবোধের একান্ত অভাব আছে ; এবং তাঁদের পারস্পরিক বিবাদ ও ঈর্ষা বিদেশীদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা পরিতৃপ্তির পক্ষে যথেষ্ট সহায়ক হবে। 

অপরপক্ষে, বিদেশী বণিকদের সামরিক কৃতিত্ব ভারতীয় রাজন্যবর্গকে মুগ্ধ করে এবং তাঁরা নিজেদের পারস্পরিক বিবাদে বিদেশীদের সাহায্য কামনা করতে থাকেন। বলা বাহুল্য, ভারতীয় রাজনীতিতে এর ফলাফল মঙ্গলজনক হয় নি। 


ক্লাইভ উপলব্ধি করেন যে, ইওরোপীয় বা ভারতীয়—যে বাহিনীই হোক না কেন, যদি তারা ইওরোপীয় রীতিতে অভ্যস্ত ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয় এবং যদি কিছু গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্য পায়, তাহলে বিশাল সংখ্যক ভারতীয় বাহিনীকে পরাজিত করা মোটেই অসম্ভব নয়। এর ফলে ইংরেজরা ভারতীয়দের নিয়ে সেনাবাহিনী গঠন করতে থাকে এবং তার পরিচালনভার অর্পিত হয় বিভিন্ন স্তরের ইংরেজ অফিসারদের ওপর। 

এই সেনাবাহিনীর সাহায্যেই তারা ভারতে কর্ণাটকের যুদ্ধের ফলে দক্ষিণ ভারতে ইংরেজরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে বাংলার মসনদেও তাদের মনোমত-প্রার্থী প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের উপকূলভাগে তারা একচ্ছত্র হয়ে ওঠে এবং এর ফলে আগামী দিনে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অপ্রতিহত গতির সূচনা হয়। 


তথ্য সূত্র:

স্বদেশ পরিচয়-জীবন মুখোপাধ্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال

×