ফারুকশিয়ারের ফরমানের শর্ত ও গুরুত্ব | Importance of Farrukhsiyar Farman
বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ স্থানীয় এবং ইওরোপীয় বণিকদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন, কিন্তু সম্রাটের ‘ফরমান’ বা নির্দেশনামার জোরে ইংরেজ কোম্পানি বাংলাদেশে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করবে—তা তিনি মেনে নিতে পারেন নি। ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ‘নায়েবসুবাদার’ থাকাকালে তিনি ইংরেজদের বিনাশুল্কে বাণিজ্যের অধিকার নিষিদ্ধ করেন এবং অন্যান্য বণিকদের সংগে সমান হারে শুল্ক প্রদানের নির্দেশ দেন।
এর প্রতিবাদে ১৭১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে জন সারম্যানের নেতৃত্বে মোগল সম্রাট ফারুশিয়ার-এর কাছে এক দৌত্য প্রেরিত হয়। এই দৌত্য সারম্যানের দৌত্য নামে পরিচিত। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ফারুশিয়ার ইংরেজ কোম্পানির অনুকূলে এক ‘ফরমান’ জারী করেন। এই ফরমান ফারুশিয়ারের ফরমান নামে পরিচিত।
এই ‘ফরমান’ অনুসারে কোম্পানি-
(১) বার্ষিক ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে বিনাশুল্কে বাণিজ্যের অধিকার পায়,
(২) কলকাতা, সুতানটী ও গোবিন্দপুরের সন্নিহিত আরও ৩৮টি গ্রাম কেনার অনুমতি পায়,
(৩) বাণিজ্যের ব্যাপারে কোম্পানি তার ছাড়পত্র বা ‘দস্তক’ ব্যবহারের অনুমতি পায় এবং
(৪) প্রয়োজনে কো স্পানিকে মুর্শিদাবাদের টাঁকশাল ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া হয়।
ফারুকশিয়ারের ফরমানের গুরুত্ব:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইতিহাসে মোগল সম্রাট ফারুশিয়ারের এই ফরমান অতি গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক ওরম্ (Orme) এই ফরমানকে কোম্পানির ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা ‘মহাসনদ’ বলে অভিহিত করেছেন। ঐতিহাসিক সি. আর. উইলসনএর মতে—এই ফরমান লাভ ছিল কোম্পানির ‘একটি সত্যিকারের কূটনৈতিক সাফল্য'। বলা বাহুল্য, এর মাধ্যমে কোম্পানির প্রাপ্ত পুরনো অধিকারগুলি নতুনভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ কোম্পানির এই সব অধিকারের বিরোধী হলেও, তাঁর পক্ষে এই অধিকারগুলি সরাসরি অস্বীকার করা সম্ভব ছিল না। এই অধিকারগুলি অর্জন করে কোম্পানি অন্যান্য ইওরোপীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অপেক্ষা অধিকতর ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার অধিকারী হয়। সর্বোপরি, এই ফরমান ভারতে ইংরেজ বণিকদের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করে।
তথ্য সূত্র:
স্বদেশ পরিচয়-জীবন মুখোপাধ্যায়।