পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল বা তাৎপর্য | Consequences of the Battle of Plassey

পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল বা তাৎপর্য

পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল বা তাৎপর্য | Consequences of the Battle of Plassey



পলাশীর যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা ও যুদ্ধের ব্যাপকতার দিক থেকে বিচার করলে এই যুদ্ধকে সামান্য খণ্ডযুদ্ধ ব্যতীত অপর কিছু বলা যায় না। কিন্তু ভারত ইতিহাসে এই যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বাঙালী কবি নবীনচন্দ্র সেন পলাশীর যুদ্ধকে ভারতে অন্ধকারময় রাত্রির সূচনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র-র মতে—পলাশীর যুদ্ধ বিশেষ 
ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ। 


এই যুদ্ধের ফলাফল বাংলায় এবং পরে সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্যের পথ সুগম করে। এতে ব্রিটিশের মর্যাদা বহু পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং এই একটি ধাক্কাতেই তারা ভারত সাম্রাজ্যের এক অতি শক্তিশালী দাবিদাররূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। সমৃদ্ধ বাংলা প্রদেশের রাজস্বের টাকায় তারা একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করে নেয়। বাংলার কর্তৃত্ব লাভ ইঙ্গ-ফরাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মীমাংসা করে দেয়। 


(১) পলাশীর যুদ্ধের ফলে ইংরেজদের অনুগ্রহে মীরজাফর বাংলার মসনদে বসেন এবং তিনি ইংরেজদের হাতের পুতুলে পরিণত হন—প্রকৃতপক্ষে ইংরেজ কোম্পানিই বাংলার কর্তায় পরিণত হয় এবং তারাই ছিল নবাবের “সিংহাসনের পশ্চাতে প্রকৃত শক্তি।” পলাশীর যুদ্ধ ইংরেজদের পক্ষে ভারত-জয়ের পথ সুগম করে। 


(২) যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য স্থাপিত হয় স্থাপিত হয়, তারা বিনাশুল্কে বাংলার বাণিজ্য করতে থাকে। এইভাবে অপরাপর ইওরোপীয় বণিক ও দেশীয় বণিকদের সর্বনাশের পথ উন্মুক্ত হয়। 


(৩) বাংলার মসনদে বসে মীরজাফর ইংরেজ কোম্পানি ও ক্লাইভকে প্রভূত অর্থ ও নানা উপঢৌকন দান করেন। এর ফলে বাংলার রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়। এ ছাড়া, কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা নানাভাবে বাংলার আর্থিক সম্পদ শোষণ করতে থাকে। এই ঘটনাকে ‘পলাশী লুণ্ঠন’ (‘Plassey plunder') বলা হয়। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক টমসন ও গ্যারাট-এর মতে, বাংলার মানুষের শেষ রক্তবিন্দু শুষে না নেওয়া পর্যন্ত ইংরেজরা তাদের শোষণ অব্যাহত রেখেছিল। 


(৪) বাংলার অমিত ঐশ্বর্য ব্যবহার করে দক্ষিণ ভারতে ইংরেজরা ফরাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়যুক্ত হয়। এই কারণে বলা হয় যে, পলাশীর যুদ্ধ ভারতে ফরাসীদের ভাগ্য নির্ধারণ করে।


(৫) অনেকে বলেন যে, এই যুদ্ধের ফলে বাংলায় ইংরেজ প্রভুত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই মত সঠিক নয়, কারণ মীরজাফরের সংগে ইংরেজদের সন্ধির শর্তাবলীতে এ ধরনের কোন কথা উল্লেখ নেই। এ ছাড়া, পরবর্তীকালে মীরকাশিম ইংরেজ শক্তিকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেন। বাংলায় সার্বভৌম শক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইংরেজদের আরও কয়েকটি যুদ্ধ করতে হয়।
 

(৬) ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার-এর মতে, পলাশীর যুদ্ধের ফলে ভারতে মধ্যযুগের অবসান ঘটে ও আধুনিক যুগের সূচনা হয়। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারার সংস্পর্শে এসে ভারত ইতিহাসে নবজাগরণের সূচনা হয় এবং এর ফলে ভারতের মৃতপ্রায় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে নব-দিগন্তের উন্মোচন ঘটে।


তথ্য সূত্র:
স্বদেশ পরিচয়-জীবন মুখোপাধ্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال

×