নাদির শাহের ভারত আক্রমণ | Nader Shah's Invasion of India

নাদির শাহের ভারত আক্রমণ

নাদির শাহের ভারত আক্রমণ | Nader Shah's Invasion of India


মোগল সাম্রাজ্যের এই পতনোন্মুখ অবস্থায় পারস্যের অধিপতি নাদির শাহ ১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে ভারত আক্রমণে অগ্রসর হন। আফগানিস্তান ও পাঞ্জাব দখলের পর তিনি দিল্লীর দিকে অগ্রসর হন। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে পানিপথের অদূরে কার্নাল নামক স্থানে মোগল সম্রাট মহম্মদ শাহ তাঁর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন এবং ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবার শর্তে সন্ধি-স্বাক্ষরে বাধ্য হন। ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে নাদির শাহ দিল্লীতে প্রবেশ করে দেওয়ানই-খাসে অবস্থান করেন। এ সময় নাদির শাহের মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব রটে। 


দিল্লীবাসীরা তখন নাদির শাহের সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে নয়শ’ সৈন্যকে হত্যা করে। ক্রুদ্ধ নাদির শাহ্ প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য দিল্লীবাসীদের হত্যার নির্দেশ দেন। দীর্ঘ সাত ঘন্টা ধরে তাঁর সেনাবাহিনী দিল্লী নগরীতে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও লুন্ঠন চালায় এবং শেষ পর্যন্ত মহম্মদ শাহের কাতর অনুরোধে তিনি ক্ষান্ত হন। এরপর তিনি শাহজাহানের বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন ও কোহিনূর মণি, প্রায় ১৫ কোটি মুদ্রা, প্রচুর মণি-মাণিক্য, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং ৩০০ হাতি, ১০ হাজার ঘোড়া ও ১০ হাজার উট-সহ স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। মহম্মদ শাহ সিন্ধু, কাবুল ও পশ্চিম পাঞ্জাব নাদির শাহকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং লাহোরের মোগল শাসনকর্তা নাদির শাহকে বাৎসরিক ৫০ লক্ষ টাকা দিতে স্বীকৃত হন।



নাদির শাহের আক্রমণ পতনোন্মুখ মোগল সাম্রাজ্যের বুকে চরম আঘাত হানে। আবদালী-র (১৭৭৮-৬৭ খ্রিঃ) আক্রমণে সাম্রাজ্য ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সাম্রাজ্যের মর্যাদা ধূলায় লুণ্ঠিত হয় এবং সাম্রাজ্যের দুর্বলতা ইংরেজ বণিক ও মারাঠাদের কাছে প্রকট হয়ে ওঠে। সাম্রাজ্যের মর্যাদা বিনষ্ট হওয়ায় ‘উজির’ পদের জন্য অভিজাতদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর রূপ ধারণ করে। নাদির শাহ অভিজাতদের কাছ থেকেও প্রচুর অর্থ আদায় করেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত অভিজাতরা কৃষকদের ওপর যথেষ্ট অত্যাচার শুরু করেন এবং উত্তম জায়গীর লাভের আশায় অভিজাতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। 


উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে আফগান এবং দক্ষিণ দিক থেকে মারাঠাদের আক্রমণ শুরু হয়। পাঞ্জাব বিধ্বস্ত হওয়ায় সাম্রাজ্যের সামরিক ভিত্তি বিনষ্ট হয় এবং তা আহম্মদ শাহ আবদালীকে ভারত আক্রমণে উৎসাহিত করে। নাদির শাহের আক্রমণের ফলে মোগল সাম্রাজ্যের পতন সুনিশ্চিত হয়ে পড়ে—তার পুনরুজ্জীবনের আর কোন আশাই রইল না। পরবর্তীকালে আফগানিস্তানের অধিপতি আহম্মদ শাহ আবদালীর (১৭৪৮ - ৬৭ খ্রি:) আক্রমণে সাম্রাজ্য ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।


তথ্য সূত্র:

স্বদেশ পরিচয়-জীবন মুখোপাধ্যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×