‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট' পত্রিকার উদ্দেশ্য ছিল জনগণের কাছে দেশের স্বার্থ তুলে ধরা এবং প্রচলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে তাঁর পত্রিকায় অসংখ্য প্রবন্ধ ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিলেন। জাতীয়তাবাদী আদর্শ প্রচারে এই পত্রিকা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
হরিশচন্দ্র বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারগুলির বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি নারীশিক্ষা প্রসার, বিধবা-বিবাহ আন্দোলন প্রভৃতির সমর্থনে তাঁর পত্রিকাতে অসংখ্য প্রবন্ধ ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিলেন। নারীশিক্ষার প্রসারে এই পত্রিকায় ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটনকে অনুসরণের উপদেশ দেওয়া হয়। বিধবা-বিবাহর সমর্থনে আন্দোলনকারীদের পাশে থেকে এই পত্রিকা বিধবা-বিবাহ আইনসম্মত করার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি পেশ করে।
পত্রিকা ব্রিটিশ সরকারের শোষণ ও অত্যাচারের কথাও খুব গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরত। ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের পক্ষে এই পত্রিকা অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল। এই পত্রিকা সাঁওতালদের ওপর অত্যাচারের প্রশাসনিক ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ তদন্তের দাবি করে।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে হরিশচন্দ্র সরাসরি সমর্থন না জানালেও সিপাহিদের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল। তবে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়টে’র সবচেয়ে বড়ো অবদান নীল বিদ্রোহীদের প্রতি সক্রিয় সমর্থন দান। বাংলার নীলচাষকে কেন্দ্র করে ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার কৃষক সমাজ যে স্বতস্ফূর্ত বিদ্রোহ করেছিল ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ তা সবিস্তারে তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র:
১. ইতিহাস ও পরিবেশ- Password- এ কে এম সরিফুজ্জামান।