মূল্যায়নের মৌলিক নীতিসমূহ | Basic Principles of Evaluation
ভূমিকা:
আমরা জানি যে শিক্ষার ব্যাপক ধারণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিসত্তার সার্বিক, সুষম ও সর্বোত্তম বিকাশের পরিমাপক হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়ন শব্দটিকে চয়ন করা হয়েছে। এজন্যই শিক্ষায় মূল্যায়ন একটি আধুনিক ধারণা। গতানুগতিক পরীক্ষা গ্রহণের ও পরিমাপ কৌশলের পরিবর্তে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন সত্যই নতুনত্বের দাবি রাখে।
যাইহোক, যে নীতিসমূহ উক্ত মূল্যায়ন ধারণার উদ্ভাবনে খুবই কার্যকরি ভূমিকা নিয়েছে সেগুলিকেই মূল্যায়নের মৌলিক নীতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়—কারণ ঐ নীতিগুলি শিক্ষণের তাত্ত্বিক ধারণার ওপর ভিত্তি করেই সংগঠিত করা হয়েছে। এই নীতিসমূহ হচ্ছে
প্রথমত,
এটুকু সকলেই বোঝেন যে শিক্ষা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া হিসেবে শিক্ষার্থীর জীবন বিকাশের প্রবহমানতায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় এবং তার জীবনে কাম্য ও বাঞ্ছিত বিকাশ মূর্ত করে তোলে। ঐ ধরনের বিকাশমূলক পরিবর্তন কতখানি হয়েছে তা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন এবং সেটুকু অসম্ভবও নয়। তাই মূল্যায়নের অন্যতম নীতি হচ্ছে শিক্ষার্থীর বিকাশধৰ্মী আচরণের শিক্ষাগত মূল্যকে মূর্ত করে তোলা।
দ্বিতীয়ত,
মূল্যায়নের নীতি হিসেবে শিখন এবং শিক্ষণ উভয় প্রক্রিয়ার উন্নতিসাধনের সহায়তায় মূল্যায়নের কাজকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কতগুলি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শিক্ষাকাজ পরিচালনা করা হয়। এদিক থেকে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, বোধ, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, আগ্রহ, রসোপলব্ধি এবং বিভিন্ন চারিত্রিক গুণের বিকাশে শিক্ষার ভূমিকাকে স্বাগত জানানো হয়।
বস্তুত, শিক্ষার্থীর বিশেষ বিশেষ গুণের বিকাশে শিক্ষা কতখানি সফলতা পেতে পারে এবং আদৌ তা পেতে পারে কিনা জানার জন্যও প্রয়োজন মূল্যায়নের।
তাই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার নিজস্ব উদ্দেশ্যভিত্তিকতা থাকলেও শিক্ষার উপাদান পাঠক্রমের উদ্দেশ্যভিত্তিকতাকেও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নকে এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই প্রবর্তন করা হয়েছে।
তৃতীয়ত,
আধুনিক শিক্ষাজগতে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য পরস্পর নির্ভরশীল আচরণসমূহের পরিবর্তন ও পরিমার্জন খুবই জরুরি মনে করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আচরণের এই পরিবর্তন ও পরিমার্জন কতখানি ঘটেছে বা আদৌ তা ঘটেছে কিনা তা পরিমাপের প্রচেষ্টা নীতিগতভাবে গ্রহণ করতে হয় মূল্যায়নকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সামগ্রিক কৌশল হিসেবে।
শেষত, শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষণ পদ্ধতি (Teaching method) এবং শিক্ষণ কৌশল কতখানি শিক্ষার উদ্দেশ্যসমূহকে বাস্তবায়িত করতে পেরেছে এবং আদৌ পারবে কিনা তা বিচার করতেও মূল্যায়নের প্রয়োজন।
তাই শিখন ও শিক্ষণ উভয় প্রক্রিয়ার উন্নতিসাধনের সহায়তার নীতিকে গ্রহণ করেই মূল্যায়নকে কাজ করে যেতে হয়।
মন্তব্য:
উপরোক্ত নীতির উপর নির্ভর করে মূল্যায়নকে আধুনিক শিক্ষাক্ষেত্রে নিজের ভূমিকাকে সক্রিয় ও সার্থক করার ব্যবস্থা নিতে হয় বলেই উক্ত নীতিসমূহকে মূল্যায়নের মৌলিক নীতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
তথ্য সূত্র:
বি. এ. শিক্ষাবিজ্ঞান মূল্যায়ন ও নির্দেশনা
- অধ্যাপক কে. ব্যানার্জী।
Tags
শিক্ষামূলক