খিলাফত আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও | Short Note On Khilafat Movement


খিলাফত আন্দোলন | খিলাফত আন্দোলনের কারণ | খিলাফত আন্দোলনের পটভূমি | খিলাফত আন্দোলনের ফলাফল


ভূমিকা: 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে খিলাফত এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। আসলে ভারতের স্বাধীনতার জন্য নয়, তুরস্কের সুলতানকে খলিফার পদ ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে খিলাফত আন্দোলন শুরু হয়। তবে অচিরেই গান্ধিজির উদ্যোগে খিলাফত আন্দোলনের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের মিলন ঘটলে জাতীয় আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।


খিলাফত আন্দোলন:

খিলাফত আন্দোলনের কারণ পটভূমি:

তুরস্কের সুলতান ছিলেন সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ‘খলিফা’ বা ধর্মগুরুস্বরূপ। ‘খলিফা’ শব্দ থেকেই ‘খিলাফৎ’ আন্দোলনের নামকরণ হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তুরস্ক জার্মানির পক্ষ নেয়। যুদ্ধে শেষপর্যন্ত মিত্রশক্তি জয়ী হলে তারা তুরস্ক সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। তুরস্কের সুলতানের ‘খলিফা’ পদ কেড়ে নেওয়া হয়। স্বভাবতই গোটা বিশ্বের মুসলিম সমাজ এতে ক্ষুব্ধ হয়। এ ছাড়াও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে তুরস্ক সাম্রাজ্য থেকে এশিয়া মাইনর, থ্রেস ইত্যাদি অঞ্চল আলাদা করা হবে না। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ব্রিটিশ তার কথা রাখেনি। এসব কারণে ভারতের মুসলিমরা শুরু করে খিলাফত আন্দোলন।


জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থন: 

কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে (১৯২০ খ্রি.) খিলাফত আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। এক প্রস্তাবে বলা হয় খিলাফত প্রশ্নের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেস এই আন্দোলনকে সমর্থন করে যাবে। গান্ধিজি এইসময় খিলাফত আন্দোলনের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেন।


খিলাফত কমিটি গঠন: 

মুসলিম তীর্থস্থানগুলির পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে মৌলানা শওকত আলি ও মৌলানা মহম্মদ আলির চেষ্টায় দিল্লি, মুম্বাই-এ বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। অবশেষে আলি ভ্রাতৃদ্বয় অন্যান্য কয়েকজনের সহায়তায় লক্ষ্ণৌতে গঠন করেন 'নিখিল ভারত খিলাফত কমিটি’ (১৯১৯ খ্রি., ২৪ নভেম্বর)।



দাবি:

মুসলিম লিগ ও জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা দিল্লিতে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে এই আন্দোলনের কর্মসূচি স্থির করেন। দাবি হিসেবে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। বেশ কয়েকটি বিষয়। যথা— সমগ্র আরব অঞ্চল তুরস্কের খলিফার হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে; 2 খলিফার সাম্রাজ্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে; 3 খলিফার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না; 4 বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলির অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে।


আন্দোলনের প্রসার: 

কংগ্রেস ও খিলাফত কমিটির মিলিত ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার ছাত্র সরকারি স্কুলকলেজ ত্যাগ করে। ছাত্রছাত্রীরা নবপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় বিদ্যালয়গুলিতে ভরতি হয়। আলিগড়ে মুসলিমদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করাচির এক সভায় জাতীয় সেনাবাহিনীর মুসলিম সেনাদের চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।


আন্দোলনের অবসান: 

খিলাফত আন্দোলন খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তুরস্কে মুস্তাফা কামাল পাশার নেতৃত্বে খলিফাতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটলে (১৯২২ খ্রিস্টাব্দে) ভারতে খিলাফত আন্দোলন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।


মূল্যায়ন: 

খিলাফত আন্দোলনের সুবাদে ভারতে সাময়িকভাবে হলেও হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে উঠেছিল। অসহযোগ আন্দোলনকে গণ আন্দোলনে পরিণত করার ক্ষেত্রে খিলাফত আন্দোলনের অবদান ছিল। জওহরলাল নেহরুর মতে, “খিলাফত আন্দোলন জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি ও ধর্মের অপূর্ব মেলবন্ধন ছিল।”


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال

×