অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল | Non-Cooperation Movement

অসহযোগ আন্দোলনের কারণ | অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট | অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি 


ভূমিকা: 

স্বরাজ অর্জনের দাবিতে গান্ধিজির নেতৃত্বে শুরু হয় অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০ খ্রি:)। জাতীয় কংগ্রেস এই প্রথম আবেদন-নিবেদন নীতি ছেড়ে সরাসরি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়। অসহযোগ আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা ঘটায়। অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির দুটি দিক ছিল—একটি ইতিবাচক, অপরটি নেতিবাচক। ইতিবাচক কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম ছিল দেশীয় শিল্পের প্রসার, দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, হিন্দু-মুসলমান ঐক্য গঠন, মাদক দ্রব্য বর্জন, অস্পৃশ্যতা দূর করা ইত্যাদি। অপরদিকে নেতিবাচক কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম ছিল বিলাতি দ্রব্য, সরকারি পদ, খেতাব, উপাধি, অনুষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, আদালত বৰ্জন প্রভৃতি।গান্ধিজির অহিংসার আদর্শে অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় কংগ্রেস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবিচল থেকে স্বরাজের লক্ষ্যে পৌঁছোনো ছিল এই আন্দোলনের মূল আদর্শ। শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে নয়, দলবদ্ধভাবেই অহিংস আদর্শে বিশ্বাস রেখে এই আন্দোলন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


অসহযোগ আন্দোলনের কারণ


১. স্বায়ত্তশাসন অর্জনে ব্যর্থতা:

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসন দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল । তাই প্রবল আশা নিয়ে ভারতবাসী ব্রিটিশের পক্ষে যুদ্ধ তহবিল গঠনের জন্য ছ-কোটি একুশ লক্ষ পাউন্ড চাঁদা দেয়। এ ছাড়াও প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ ভারতীয় সেনা ইংরেজদের হয়ে বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়। কিন্তু যুদ্ধশেষে ব্রিটিশ তার স্বায়ত্বশাসন দানের প্রতিশ্রুতি অমান্য করে। তাই আশাহত ভারতবাসী আন্দোলনের পথে যায়।


২. আর্থিক সমস্যা: 

যুদ্ধজনিত কারণে ভারতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ে। কিন্তু সেই অনুপাতে কৃষক-শ্রমিকসহ সাধারণ ভারতবাসীর আয় না বাড়ায় তারা সমস্যায় পড়ে। এই আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ভারতবাসী গণ আন্দোলনে সাড়া দেয়।


৩. রাওলাট আইন: 

ব্রিটিশ ভারতবাসীর ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ ও ন্যায়বিচারের অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য কুখ্যাত রাওলাট আইন (১৯১৯ খ্রি. ১৮ মার্চ) পাস করায়। এই আইনে বলা হয়, যে-কোনো ভারতীয়কে সন্দেহের বশে বিনা পরওয়ানায় গ্রেপ্তার বা বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা যাবে। এই আইন ভারতবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।


৪. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড: 

রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য পাঞ্জাবের অমৃতসর জেলার জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানে এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ডাকা হয়। এই সমাবেশে উপস্থিত জনতার ওপর ডায়ারের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনারা নিষ্ঠুরভাবে গুলি চালায়। এতে প্রচুর সংখ্যক নিরপরাধী নারী, বৃদ্ধ ও শিশুর মৃত্যু হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন ও ব্রিটিশের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন।


অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল বা তাৎপর্য


১. রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ:

অসহযোগ আন্দোলন ভারতীয় রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। অসহযোগ আন্দোলন ভারতবাসীর রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করেছিল।


২. কংগ্রেসের প্রভাববৃদ্ধি: 

অসহযোগ আন্দোলন জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসের মর্যাদাকে বহুগুণ বাড়িয়েছিল। এই আন্দোলনের পর সুদূর গ্রামগুলিতেও জাতীয় কংগ্রেসের শাখা-প্রশাখা গড়ে উঠতে শুরু করে। ফলে জনমানসে কংগ্রেসের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। 


৩. গান্ধিজির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: 

অহিংস পথে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ফলে জাতীয় রাজনীতিতে গান্ধিজির প্রভাব-প্রতিপত্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। জাতির নেতা হিসেবে গান্ধিজি সারা ভারতে পরিচিতি পান


৪. আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি: 

অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে খাদি বস্ত্রশিল্পসহ বিভিন্ন দেশীয় শিল্পের প্রসার ঘটে। এই আন্দোলনে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ যোগ দেওয়ায় জাতপাতের ভেদরেখা অনেকটাই মুছে যায়। এই আন্দোলনের সুফল হিসেবে বেশ কিছু দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠে।



তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×