ভারতের ওপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব | Impact of World War I on India


ভারতের ওপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল | প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তাৎপর্য 


ভূমিকা: 

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর জার্মানি মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ভারতেও সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। ভারতবাসীর মনে ইংরেজ সরকারের প্রতি ক্ষোভ ও অসন্তোষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।


ভারতের ওপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব:


সমাজের ওপর প্রভাব :


১. সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের পুরাতন সমাজব্যবস্থা ভেঙে যায়। সমাজজীবনে জনসাধারণের গুরুত্ব বাড়ে। হিন্দু সম্প্রদায় ও তথাকথিত ভদ্রলোক শ্রেণির প্রভাব হ্রাস পায়। সমাজে শ্রমিক, কৃষক, বণিক, কারিগর শ্রেণির প্রভাব বাড়ে।


২. কৃষক শোষণ বৃদ্ধি: 

বিশ্বযুদ্ধজনিত কারণে সমাজের জমিদার শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা ক্ষতিপূরণের জন্য কৃষকদের ওপর বিভিন্ন ধরনের কর চাপিয়ে শোষণের মাত্রা বাড়ায়। বেশিরভাগ জমি জমিদারদের কুক্ষিগত হওয়ায় সমাজের ভূমিহীন কৃষকদের সংখ্যা বাড়ে।


৩. কুটির শিল্পের উৎপাদন হ্রাস: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ভারতের গ্রামীণ কুটির শিল্পের উৎপাদন হ্রাস পায়। ফলে কারিগর, ক্ষুদ্র উৎপাদক ও ছোটো ব্যবসায়ীরা সমাজে তাদের মর্যাদা হারায়।


৪. শ্রমিক ছাঁটাই: 

মন্দাজনিত কারণে কলকারখানাগুলিতে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হলে সমাজে শ্রমিক শ্রেণির জীবিকা সমস্যা দেখা দেয়। ফলে তাদের সামাজিক জীবনযাত্রার মান নিম্নগামী হয়।


অর্থনীতির ওপর প্রভাব:


১. করের বোঝা: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ডের প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ক্ষতিপূরণের জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর ওপর বিপুল পরিমাণ করের বোঝা চাপায়। যুদ্ধ কর ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের উপকরের বোঝা টানতে গিয়ে ভারতবাসী আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে।


২. আর্থিক সংকট: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা ভারতের আর্থিক সম্পদকে কাজে লাগিয়েছিল। ভারত থেকে ব্রিটিশ সরকার দশ কোটি পাউন্ড স্টার্লিং অর্থ সংগ্রহ করায় ভারতীয় অর্থনীতি তীব্র সংকটের মুখে পড়ে।


৩. মূল্যবৃদ্ধি: 

যুদ্ধজনিত কারণে ভারতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায়। চাল, গম, কেরোসিন, কাপড় থেকে শুরু করে ওষুধপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।


রাজনীতির ওপর প্রভাব :


১. চরম রাজনৈতিক সংকট: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের জাতীয় রাজনীতি চরম সংকটের মুখোমুখি হয়। নেতৃত্বের অভাব ও সরকারি দমননীতির ফলে কংগ্রেসের চরমপন্থী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।


২. লিগের নেতৃত্ব বদল: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মুসলিম লিগের নেতৃত্ব আলিগড় নেতাদের হাত থেকে মৌলানা মহম্মদ আলি, সৌকত আলি, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ তরুণ নেতার হাতে চলে যায়।


৩. বিপ্লবী তৎপরতা বৃদ্ধি: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে (১৯১৪ খ্রি., ৪ আগস্ট) দেশ ও দেশের বাইরে বিপ্লবীদের মধ্যে ভারতের স্বাধীনতার ব্যাপারে বিশেষ তৎপরতা দেখা দেয়। ভারতীয় বিপ্লবীরা এসময়ে ব্রিটিশের শত্রু জার্মানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতকে স্বাধীন করতে সচেষ্ট হন। এই লক্ষ্যে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে ভারতীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় গদর পার্টি। রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে ভারতজুড়ে বিদ্রোহের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। বাঘাযতীন ও তাঁর সহযোগীদের চরম আত্মবলিদানের নিদর্শন হিসেবে ‘বুড়িবালামের যুদ্ধ' (১৯১৫ খ্রি.) স্বীকৃতি পায়। জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে (১৯১৬ খ্রি.) চরমপন্থী ও নরমপন্থীদের মিলন ঘটলে জাতীয় রাজনীতি নতুন খাতে প্রবাহিত হয়।


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×