ভূমিকা:
ভারতে ব্রিটিশবিরোধী খিলাফৎ, অসহযোগ, আইন-অমান্য, ভারত ছাড়ো ইত্যাদি ছিল মূলধারার আন্দোলন। জাতীয় আন্দোলনের মূলধারার পাশাপাশি পরিচালিত অন্যান্য আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম ছিল হোমরুল আন্দোলন। একদিকে অ্যানি বেশান্তের হোমরুল লিগ, অপরদিকে তিলকের হোমরুল লিগ—উভয় লিগ মিলিতভাবে হোমরুল আন্দোলন গড়ে তোলে।
হোমরুল আন্দোলন
১. অর্থ ও উদ্দেশ্য :
‘হোমরুল’ শব্দের অর্থ হল স্বায়ত্তশাসন। হোমরুল আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল পঞ্চায়েত, জেলা বোর্ড, পৌরসভাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। এই আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্য থেকেই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দাবি করা হয়।
২. বেশান্তের ভূমিকা:
অ্যানি বেশান্ত মাদ্রাজের আডিয়ারে হোমরুল লিগ (১৯১৬ খ্রি.) গঠন করেন। অচিরেই কানপুর, বোম্বাই, এলাহাবাদ, বারাণসীসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই লিগের প্রায় দুশোটি শাখা গড়ে ওঠে। স্বায়ত্তশাসন অর্জনের লক্ষ্যে এই লিগ আন্দোলন শুরু করে।
৩. তিলকের ভূমিকা:
বালগঙ্গাধর তিলক বোম্বাইয়ের বেলগাঁওতে গঠন করেন 'ইন্ডিয়ান হোমরুল লিগ’ (১৯১৬ খ্রি.)। এই লিগের মাধ্যমে তিলক স্বরাজ অর্জনের লক্ষ্যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিলক বলেন, “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং তা আমাকে পেতেই হবে।”
৪. আন্দোলনের প্রসার:
তিলকের হোমরুল লিগ বোম্বাই, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, বেরার প্রভৃতি অঞ্চলে এই আন্দোলনের প্রসার ঘটায়। অপরদিকে, বেশান্তের হোমরুল লিগ মাদ্রাজ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, সিন্ধুপ্রদেশে হোমরুল আন্দোলন পরিচালনা করে। আন্দোলনের তীব্রতা দেখে ব্রিটিশ সরকার প্রথমে শ্রীমতী বেশান্ত ও পরে তিলককে গ্রেপ্তার করে।
৫. আন্দোলনের অবসান:
গান্ধিজির পরিচালনায় অসহযোগ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হলে ধীরে ধীরে হোমরুল আন্দোলনের তীব্রতা হ্রাস পায়। হোমরুলপন্থীদের অনেকেই গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তিলকের মৃত্যুর পর এই আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনের মূলধারার সঙ্গে মিশে যায়।
গুরুত্ব:
ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে হোমরুল আন্দোলন ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ—
১. হোমরুল আন্দোলনই প্রথম স্বরাজের আদর্শকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়।
২. এই আন্দোলনের তীব্রতা দেখে ভারত সচিব মন্টেগু এবং ভাইসরয় চেমসফোর্ড ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
৩. এই আন্দোলনই প্রথম শহর ও গ্রামের স্বাধীনতাকামী মানুষদের মধ্যে যোগসূত্র গড়ে তোলে।
৪. এই আন্দোলন ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে গান্ধিজির উত্থানের পথকে প্রশস্ত করে।
মূল্যায়ন:
হোমরুল আন্দোলন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ভারতের রাজনীতির শূন্যতা অনেকটা পূরণ করেছিল। এই আন্দোলন জাতপাত বা ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে ভারতবাসীকে একসূত্রে বাঁধতে পেরেছিল। তা ছাড়া, এই আন্দোলন ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব তৈরি করেছিল।
তথ্য সূত্র:
ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।