আইন অমান্য আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও |

আইন অমান্য আন্দোলন | আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ | আইন অমান্য আন্দোলনের পটভূমি 


ভূমিকা:

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০ খ্রি.) দ্বিতীয় অহিংস গণ আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। ভারতের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য গান্ধিজি বড়োলাট আরউইনের কাছে ‘১১ দফা দাবি’ পেশ করেন। গান্ধিজি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া' পত্রিকায় এই আন্দোলনের রূপরেখা প্রকাশ করেন। গান্ধিজি ঘোষণা করেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত লবণ আইন, কর আইন রদ হচ্ছে, ততক্ষণ এই আন্দোলন বন্ধ হবে না।


আইন অমান্য আন্দোলন:


পটভূমি: 

অসহযোগের পর বেশ কিছু ঘটনা পুনরায় একটি গণ আন্দোলনের পটভূমি রচনা করে।  

১. গান্ধিজি হঠাৎ অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন অধরা রয়ে যায়। ফলে ভারতবাসী আর-একটি গণ আন্দোলনের প্রয়োজন অনুভব করে। 

২. দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও মোতিলাল নেহরুর উদ্যোগে স্বরাজ্য দল সাময়িকভাবে আশা জাগালেও শেষপর্যন্ত এই দল ব্যর্থ হয়। এই দলের সদস্যরা পুনরায় এক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। 

৩. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় তার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারতের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী। কৃষক সভাগুলি ও কমিউনিস্ট দল একজোট হয় পরবর্তী আন্দোলনের পটভূমি রচনায় সাহায্য করে।


কর্মসূচি: 

গান্ধিজি বড়োলাটের কাছে ১১ দফা দাবি পেশ করেন। এগুলির মধ্যে অন্যতম কয়েকটি ছিল—[i] ভূমিরাজস্ব ও সামরিক খাতের খরচ শতকরা ৫০ ভাগের বেশি কমানো। [ii] লবণ কর তুলে নেওয়া [iii] বিদেশি পণ্যের ওপর কর চাপানো। [iv] মাদক দ্রব্য বর্জন। [v] রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি। [vi] ভারতীয়দের আত্মরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার দান ইত্যাদি।


আন্দোলনের সূচনা—ডান্ডি অভিযান: গান্ধিজির দাবিগুলি ব্রিটিশ সরকার মেনে নিতে অস্বীকার করে। ফলস্বরূপ কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতি আইন অমান্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় (১৯৩০ খ্রি., ১৬ ফেব্রুয়ারি)। গান্ধিজি গুজরাতের সবরমতি আশ্রম থেকে ৭৯ জন অনুগামী নিয়ে ডান্ডি অভিযান (১৯৩০ খ্রি., ১২ মার্চ) শুরু করেন। ২৪ দিনে ২০০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে গান্ধিজি আরব সাগরের উপকূলে গুজরাতের ডান্ডি গ্রামে পৌঁছোন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে (৬ এপ্রিল) এখানে তিনি নিজে সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরি করেন এবং আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা  ঘটান।

  

আন্দোলনের প্রথম পর্যায়:

গান্ধিজির লবণ আইন ভঙ্গের সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশজুড়ে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রসার ঘটে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে সমুদ্র আছে সেখানে লবণ আইন ভঙ্গ করা হয়। আর যেখানে সমুদ্র নেই সেখানে মাদক দ্রব্য ও বিলিতি বস্ত্র ইত্যাদি বয়কট শুরু হয়। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে খাজনা ও কর বন্ধের আন্দোলন তীব্র রূপ নেয়। মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের গ্রামগুলিতে ‘বন সংরক্ষণ আইন’ ভাঙা হয়। খান আবদুল গফফর খান তাঁর ‘খোদা-ই-খিদমতগার’ (ঈশ্বরের সেবক) দল নিয়ে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে নেতৃত্ব দেন। আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে ব্রিটিশ তীব্র দমন নীতির আশ্রয় নেয়। জাতীয় কংগ্রেসকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলন চলাকালীন ব্রিটিশ সরকার লন্ডনে প্রথম গোলটেবিল বৈঠক (১৯৩০ খ্রি.) ডাকে। কিন্তু কংগ্রেস এই বৈঠকে যোগ না দেওয়ায় বড়োলাট আরউইন গান্ধিজির সঙ্গে গান্ধি-আরউইন চুক্তি (১৯৩১ খ্রি.) সম্পাদন করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে গান্ধিজি দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে (১৯৩১ খ্রি.) যোগ দেন।


আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়: 

দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হলে গান্ধিজি খালি হাতে দেশে ফিরে আসেন এবং পুনরায় এই আন্দোলন শুরু করেন। যুক্তপ্রদেশে (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) জওহরলালের নেতৃত্বে কৃষকরা সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড এই পরিস্থিতিতে ‘সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা নীতি’ ঘোষণা করেন। এই নীতির বিরুদ্ধে গান্ধিজি অনশন শুরু করেন। ড. বি. আর. আম্বেদকরের সঙ্গে ‘পুনা চুক্তি’ (১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষর করে গান্ধিজি নিজেকে হরিজন আন্দোলনে নিয়োগ করেন। শেষপর্যন্ত নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে (১৯৩৪ খ্রি., মে)।


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×