ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল কেন | ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটার কারণসমূহ | ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপট
ভূমিকা:
' বিপ্লব' কথাটির অর্থ হল, ‘আমূল পরিবর্তন’ অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে প্রথমে ইংল্যান্ডে ও পরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে উৎপাদনের কাজে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়। এর ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমশক্তির পরিবর্তে যন্ত্রশক্তির সাহায্যে কম সময়ে বেশি পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন শুরু হয় যা ‘শিল্পবিপ্লব’ নামে পরিচিত।
ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটার কারণ: ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের সূচনার কারণগুলি হল:
১. বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার:
অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে দৈনন্দিন জীবনে নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক যন্ত্র আবিষ্কৃত হতে থাকে, যা শিল্পবিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করে। জন কে উড়ন্ত মাকু (১৭৭৩ খ্রি.), হারগ্রিভস্—স্পিনিং জেনি (১৭৬৫ খ্রি.), আর্করাইট— ওয়াটার ফ্রেম, (১৭৬৭ খ্রি.), কার্টরাইট—পাওয়ার-লুম (১৭৭৯ খ্রি.), জেমস ওয়াট—বাষ্পীয় ইঞ্জিন (১৭৬৯ খ্রি.), হামফ্রে ডেভি—সেফটি ল্যাম্প (১৮১৫ খ্রি.), জর্জ স্টিফেনসন—বাষ্পচালিত রেল ইঞ্জিন (১৮১৪ খ্রি.), স্যামুয়েল ক্রম্পটন—মিউল যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এইসব আবিষ্কার ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করে।
২. কৃষির উন্নতি:
অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে কৃষিব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। উৎপন্ন ফসল থেকে ভালো আয়ের মাধ্যমে কৃষকরা শিল্পদ্রব্য কেনার ক্ষমতা অর্জন করে। ফলে দেশের মধ্যে এক শিল্পকেন্দ্রিক বাজার গড়ে ওঠে এবং কৃষির ওপর ভিত্তি করে শিল্পবিপ্লব ঘটে।
৩. মূলধনের জোগান:
ইংল্যান্ডে সেইসময়ে বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগান ভালোই ছিল। ভারতসহ প্রাচ্যের অন্যদেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য করে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি মজবুত হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের জাতীয় ব্যাংকগুলিও বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে ঋণ দিয়েছিল, যা শিল্পবিপ্লবে সাহায্য করেছিল।
৪. অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ:
ইংল্যান্ডের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া শিল্পসামগ্রীর উৎপাদনে, বিশেষত বস্ত্রশিল্পের পক্ষে অনুকূল ছিল। এখানে বাণিজ্য বন্দর, খাল ও খাঁড়ি থাকায় কাঁচামাল ও শিল্পজাত দ্রব্য পরিবহণ অনেক সহজ হয়।
৫. কাঁচামালের জোগান:
ভারত, আমেরিকা ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্রিটিশ উপনিবেশগুলি থেকে সস্তায় প্রচুর কাঁচামাল ইংল্যান্ডে নিয়ে আসা হয়। বৃহৎ ও ভারী শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যেমন—কয়লা, লোহা, টিন, তামার আমদানি পর্যাপ্ত এবং সহজলভ্য হওয়ায় ইংল্যান্ডে দ্রুত শিল্পবিপ্লব ঘটে।
৬. শ্রমিকের জোগান:
সপ্তদশ শতক থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বহু শ্রমিক রুজিরোজগারের আশায় ইংল্যান্ডে আসে। এর ফলে একদিকে যেমন ইংল্যান্ডের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং অপরদিকে তেমন শিল্পদ্রব্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকের জোগানও অব্যাহত থাকে।
৭. আন্তর্জাতিক বাজার:
শিল্পজাত পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য বিদেশের বাজারও প্রয়োজন। উত্তর আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে এই বাজার গড়ে ওঠে । উৎপাদিত অতিরিক্ত পণ্যসামগ্রী এই বাজারগুলিতে বিক্রয় করা সহজ হয়।
তথ্য সূত্র:
ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।