ভূমিকা:
ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের শেষ শক্তিশালী সম্রাট ছিলেন ঔরঙ্গজেব। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের একাধিক কারণ থাকলেও এই সাম্রাজ্যের পতনের ক্ষেত্রে ঔরঙ্গজেব (আলমগীর) তাঁর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
ঔরঙ্গজেবের দায়িত্ব:
১. দাক্ষিণাত্য নীতি:
ঔরঙ্গজেব জীবনের শেষ ২৫ বছর দাক্ষিণাত্যে কাটান। দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা রাজ্য গ্রাস এবং মারাঠাদের দমন করার লক্ষেই তিনি দাক্ষিণাত্যে অবস্থান করেন। দীর্ঘদিন দিল্লিসহ উত্তর ভারতে সম্রাটের অনুপস্থিতির দরুন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
২. ধর্মনীতি:
ঔরঙ্গজেব মোগল সাম্রাজ্যে অনুদার ধর্মনীতির প্রয়োগ ঘটান। তিনি আকবরের উদার ধর্মনীতি পরিত্যাগ করেন এবং ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেন। ফলস্বরূপ রাজপুত, জাঠ, শিখ, সত্নামী, বুন্দেলা প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
৩. রাজপুত নীতি:
যে রাজপুতরা আকবরের আমলে ছিল মোগলদের বন্ধু, ঔরঙ্গজেবের আমলে তারাই হয়ে ওঠে মোগল সাম্রাজ্যের শত্রু। ঔরঙ্গজেব রাজপুতদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ চালালে রাজপুত সেনাপতি ও সৈন্যরা মোগল সেনাবাহিনী ত্যাগ করে। ফলে মোগল সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি:
ঔরঙ্গজেব উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের আফগান উপজাতিদের দমন করতে সচেষ্ট হন। এই লক্ষে তিনি দাক্ষিণাত্য থেকে দক্ষ সেনাপতিদের সরিয়ে আনেন। এই সুযোগে শিবাজি, শম্ভুজি, রাজারামের নেতৃত্বে মারাঠারা মোগলদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অন্যদিকে আফগান উপজাতিভুক্ত ইউসুফজাই ও আফ্রিদি সম্প্রদায় মোগলদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলস্বরূপ মোগল সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
তথ্য সূত্র:
ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।