শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠা শক্তির উত্থান | Rise of Marathas


শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠা শক্তির উত্থান আলোচনা করো


ভূমিকা:

সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠা একজন সামান্য জায়গিরদারের পুত্র হয়েও শুধুমাত্র প্রতিভা, দক্ষতা ও সামরিক শক্তির জোরে শিবাজি মারাঠা জাতির নেতা হয়ে ওঠেন। শতধা বিভক্ত মারাঠাদের জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তিনি ঐক্যবদ্ধ মারাঠা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।


শিবাজি কর্তৃক মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা:


১. বিভিন্ন দুর্গ জয়ের মাধ্যমে: 

১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে দাদাজি কোণ্ডদেব-এর মৃত্যুর পর শিবাজি পুনা জায়গিরের প্রকৃত শাসক হয়ে ওঠেন। এসময় থেকেই তিনি একে একে বিভিন্ন দুর্গ দখল করতে থাকেন। বিজাপুর রাজ্যের বিশৃঙ্খলার সুযোগে শিবাজি প্রথমে তোরণা দুর্গ ও পরে একে একে। রায়গড়, সিংহগড়, ইন্দ্রপুর, পুরন্দর প্রভৃতি দুর্গ দখল করেন।


২. আহম্মদনগর ও উত্তর কোঙ্কনে কর্তৃত্ব স্থাপনের সূত্রে: 

১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যে অবস্থানকালে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব বিজাপুর আক্রমণ করেন। শিবাজি সেই সুযোগে মোগল অধিকৃত আহম্মদনগর ও জুনার দখল করেন। এ সময়ে পিতা শাহজাহানের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য ছেড়ে দিল্লি গেলে শিবাজি উত্তর কোঙ্কনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করেন।


৩. দক্ষিণ কোঙ্কন অধিকারের দ্বারা: 

বিজাপুরের সুলতান শিবাজিকে দমন করার উদ্দেশ্যে সেনাপতি আফজল খাঁকে শিবাজির কাছে পাঠান। আফজল খাঁ সন্ধির অছিলায় শিবাজির শিবিরে আসেন। শিবাজিকে আলিঙ্গনের ছলে ছুরি দিয়ে হত্যা করতে গেলে শিবাজি লোহার বাঘনখ দিয়ে আফজল খাঁকে হত্যা করেন। এরপর শিবাজি দক্ষিণ কোঙ্কন ও কোলাপুর অধিকার করেন।


৪. মোগলদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দ্বারা: 

দাক্ষিণাত্যে শিবাজির অগ্রগতিকে প্রতিহত করার জন্য ঔরঙ্গজেব তাঁর মাতুল শায়েস্তা খাঁকে পাঠান। শিবাজি পুনায় শায়েস্তা খাঁ-র শিবিরে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে শায়েস্তা খাঁকে দাক্ষিণাত্য ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ঔরঙ্গজেব এরপর অম্বররাজ জয়সিংহকে পাঠান শিবাজিকে দমন করার জন্য। জয়সিংহের আক্রমণের তীব্রতায় শিবাজি তাঁর সঙ্গে পুরন্দরের সন্ধি (১৬৬৫ খ্রি:, ২২ জুন) স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।


৫. শিবাজির রাজ্যাভিষেকের সূত্রে: 

ঔরঙ্গজেব উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত হয়ে পড়লে শিবাজি পুনরায় মোগলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। পুরন্দরের সন্ধির শর্তানুযায়ী হাতছাড়া দুর্গগুলি শিবাজি একে একে পুনরুদ্ধার করেন। ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে ‘ছত্রপতি’ ও ‘গো-ব্রাহ্ণণ প্রতিপালক’ উপাধি ধারণ করে শিবাজি রায়গড় দুর্গে নিজের রাজ্যাভিষেক সম্পন্ন করেন।


৬. মারাঠা সার্বভৌম প্রতিষ্ঠার সুবাদে: 

রাজ্যাভিষেকের পরবর্তী ছয় বছরের মধ্যে ভেলোর, তাঞ্জোর, বেলারিসহ মহীশূরের কিছুটা অংশ নিয়ে শিবাজি মারাঠা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বীরত্বে মারাঠা সাম্রাজ্য এই প্রথম উত্তরে সুরাটের কাছে ধরমপুর থেকে দক্ষিণে গোয়া এবং পূর্বে নাসিক ও পুনা থেকে পশ্চিমে আরব সাগরের সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال

×