বাবর কীভাবে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন | Mughal Empire


বাবর কীভাবে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন | মোগল সাম্রাজ্য স্থাপনে বাবরের ভূমিকা


ভূমিকা: ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন নিষ্ঠাবান সুন্নি মুসলিম জহিরউদ্দিন মহম্মদ বাবর (১৪৮৩-১৫৩০ খ্রি.)। বাবরই প্রথম পরস্পর বিবদমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ভারতকে ঐক্যবদ্ধ ও সার্বভৌম রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন।


বাবর কর্তৃক ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা:


১. ভারত অভিযান (প্রাথমিক পর্ব): ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে কাবুল অধিকারের পর জহিরউদ্দিন মহম্মদ বাবর ভারত জয়ের পরিকল্পনা করেন। ১৫১৯-২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মোট চারবার ভারত অভিযান চালান। ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে প্রবেশ করে লাহোর ও দিপালপুর অঞ্চল দুটি দখল করে নেন। এরপর একে একে তিনি ভেরা, খুসাব ও চিনাব নদীর অববাহিকা অঞ্চলগুলি জয় করে কাবুলে ফিরে যান।


ভারতে অভিযান (দ্বিতীয় পর্ব):

১. পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়: ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে বাবর কাবুল থেকে সসৈন্যে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন। পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খাঁ লোদিকে পরাজিত করে তিনি পাঞ্জাবের দখল নেন। এরপর বাবর দিল্লির দিকে অগ্রসর হলে, দিল্লির আফগান সুলতান ইব্রাহিম লোদি তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে পানিপথের প্রান্তরে বাবর ও ইব্রাহিম লোদির মধ্যে ‘পানিপথের প্রথম যুদ্ধ’ (১৫২৬ খ্রি. ২১ এপ্রিল) বাধে। এই যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদি পরাজিত ও নিহত হন। যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাবর দিল্লি ও আগ্রা দখল করেন ও নিজেকে দিল্লির ‘বাদশা’ বলে ঘোষণা করেন।


২. খানুয়ার যুদ্ধে জয়: পানিপথের যুদ্ধে জয়ের পর বাবর দিল্লির সিংহাসন অধিকার করলেও সমগ্র ভারতবর্ষের অধীশ্বর হতে পারেননি। উত্তর ভারতে বাবর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে রাজপুত রানা সংগ্রাম সিংহের সঙ্গে ‘খানুয়ার যুদ্ধ’ (১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ) বাধে। খানুয়ার যুদ্ধে বাবর জয়ী হন, ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।


৩. চান্দেরি দুর্গ জয়: রাজপুত শক্তি ছিল বাবরের ভারত জয়ের পথে প্রধান বাধা। আর গোয়ালিয়রের চান্দেরি দুর্গ ছিল রাজপুতানার শৌর্য, বীর্যের প্রতীক ও প্রবেশদ্বার। এই দুর্গে মেদিনী রাই-এর নেতৃত্বে রানা সংগ্রাম সিংহের রাজপুত অনুচররা বাবরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সংঘবদ্ধ হচ্ছিল। বাবর এই সংবাদ পেয়ে চান্দেরি দুর্গ অবরোধ ও দখল করেন (১৫২৮ খ্রি.)। বাবর এরপর বেশ কিছু রাজপুত রাজ্য নিজের দখলে এনে রাজপুত প্রতিরোধের সম্ভাবনা নির্মূল করেন।


৪. ঘর্ঘরার বা পোপরার যুদ্ধ জয়: বাবর এরপর পূর্ব ভারতে মোগল সাম্রাজ্য বিস্তারে অগ্রসর হন। বাবরের অগ্রগতি থামানোর জন্য জৌনপুরের শাসনকর্তা মামুদ লোদি, বাংলার সুলতান নসরৎ শাহ্, বিহারের আফগান নেতা শের খাঁ প্রমুখ মিলিত হয়ে এক শক্তিজোট গঠন করেন। পাটনার কাছে গঙ্গা ও ঘর্ঘরা নদীর মিলনস্থলে বাবরের সঙ্গে এই শক্তিজোটের সংঘর্ষ বাধে (১৫২৯ খ্রি., ৬ মে)। ঘর্ঘরার এই যুদ্ধে বাবর জয়ী হন। এই যুদ্ধ জয়ের পর ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের বিরোধিতা করার মতো আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট রইল না।


মূল্যায়ন: পিতার দিক থেকে তুর্কি বীর তৈমুর লঙ ও মাতার দিক থেকে মোঙ্গল বীর চেঙ্গিস খাঁর রক্ত প্রবাহিত ছিল বাবরের ধমনিতে। তাই যুদ্ধ ছিল তাঁর সহজাত প্রবৃত্তি। বাবরের অদম্য প্রচেষ্টার ফলেই অক্ষু নদী থেকে ঘর্ঘরা নদী এবং হিমালয় থেকে গোয়ালিয়র পর্যন্ত মোগল সাম্রাজ্যসীমা (১৫২৬-১৮৫৮ খ্রি.) প্রসারিত হয়। মাত্র এগারো বছর বয়েসে পিতৃহারা ও রাজ্যহারা হয়েও বাবর যে অসীম সাহস ও ধৈর্য নিয়ে সুবিশাল মোগল সাম্রাজ্যের পত্তন করেছিলেন তার নজির ইতিহাসে বিরল।


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

close