গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জুনা খাঁ মহম্মদ-বিন-তুঘলক নাম ধারণ করে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন(১৩২৫-৫১ খ্রিঃ)। মহম্মদ-বিন-তুঘলক অসাধারণ মৌলিকত্ব ও সৃজনীশক্তির অধিকারী মহম্মদ-বিন-তুঘলক ছিলেন এক অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ। পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও উচ্চ ভাবাদর্শে ভারত ইতিহাসের মধ্যযুগে কোন সুলতানই তাঁর সমকক্ষ ছিলেন না। ঐতিহাসিক লেনপুল-এর মতে, তাঁর ধ্যান-ধারণা ও আদর্শ ছিল যুগের চেয়ে অগ্রণী। মহম্মদ বিন তুঘলক তার রাজত্বে নানা পরীক্ষামূলক কর্মসূচি করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর (১৩২৬-২৭)।
মহহমদ বিন তুঘলক দিল্লি থেকে দাক্ষিণাত্যের দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন এবং তার নাম রাখেন দৌলতাবাদ। নানা কারণে তিনি এই কাজে উদ্যোগী হন। সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় স্থানে অবস্থিত দেবগিরি রাজধানী হিসেবে নিশ্চয়ই উপযুক্ত ছিল। উত্তরপশ্চিম সীমান্তের সন্নিকটে অবস্থিত হওয়ায় দিল্লীতে সর্বদাই মোঙ্গল আক্রমণের সম্ভাবনা ছিল। দেবগিরিতে কিন্তু তা ছিল না। দেবগিরি থেকে দাক্ষিণাত্যে সুলতানী শাসন পরিচালনা করা সহজতর ছিল।
বলা বাহুল্য, কেবলমাত্র সরকারী দপ্তরগুলি স্থানান্তরিত করেই তিনি ক্ষান্ত হননি—অন্ধ ও খঞ্জ ভিক্ষুক-সহ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা দিল্লীর সকল নাগরিককেই তিনি দেবগিরি গমনে বাধ্য করেন। বলা বাহুল্য, এর ফলে নাগরিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। যাত্রীদের সুবিধার জন্য সুদীর্ঘ সাতশ’ মাইল পথে বহু অর্থব্যয়ে তিনি প্রচুর সরাইখানা নির্মাণ করেন। কিছুদিন পর আবার তিনি দিল্লীতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং জনসাধারণকে দিল্লী প্রত্যাবর্তনে বাধ্য করেন। এর ফলে জনসাধারণের দুর্দশা ও রাজকীয় অর্থের অপচয় বৃদ্ধি পায়। নানা কারণে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর হয়তো যুক্তিসঙ্গত ছিল, কিন্তু নাগরিকদের স্থানান্তর গমনে বাধ্য করা অপরিণামদর্শিতার পরিচায়ক।
তথ্য সূত্র:
স্বদেশ পরিচয় | জীবন মুখোপাধ্যায়।