সুফিবাদের প্রভাব | সুফি আন্দোলনের গুরুত্ব | সুফি আন্দোলনের ফলাফল
ভারতীয় সমাজ ও জনজীবনে সুফীবাদ এক গভীর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।
প্রথমতঃ সুফীদের সরলতা, মানবতাবাদ, ভগবৎ প্রেম, নিরুপম চরিত্র ও আড়ম্বরহীন জীবনযাত্রা সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ, শিক্ষিতঅশিক্ষিত, হিন্দু-মুসলিম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মধ্যেই সুফীরা জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এর ফলে হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় উত্তেজনা হ্রাস পায় এবং তা সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয়তঃ ইসলামের সামাজিক সাম্য ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের আদর্শ সুফীরা মেনে চলতেন। ওই কারণে তথাকথিত নিম্ন বর্ণের হিন্দু ও অস্পৃশ্যদের কাছে সুফীবাদ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
তৃতীয়তঃ সামাজিক সাম্য ও চারিত্রিক পবিত্রতায় বিশ্বাসী সুফীরা সুরাপান, জুয়াখেলা, ক্রীতদাসপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন।
চতুর্থতঃ হিন্দী ভাষা ও কাওয়ালী সংগীতের বিকাশে সুফীদের দান অবিস্মরণীয়। ইসলাম ধর্মে সংগীত বর্জনীয় হলেও অবিস্মরণীয়। ইসলাম বর্জনীয় হলেও, সুফীরা মনে করতেন যে, সংগীতে পরমাত্মার সঙ্গলাভের আনন্দ পাওয়া যায়। কথোপকথনে তাঁরা হিন্দী ভাষা ব্যবহার করতেন এবং হিন্দি ভাষায় কবিতা রচনা করতেন। এর ফলে হিন্দি ভাষারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
পঞ্চমতঃ কেবলমাত্র ধর্মচর্চার কেন্দ্র নয়—সুফীদের ‘খান্কা’-গুলি ছিল বিদ্যাচর্চা ও জ্ঞানান্বেষণের অন্যতম কেন্দ্র। অনেক ‘‘খানকা’-য়-য় নিয়মিত বিদ্যালয় পরিচালনা করা হত।
ষষ্ঠতঃ সুফীদের প্রভাবে ইসলামের ভারতীয়করণ ঘটে। সুফী সন্তরা ভারতকে তাঁদের স্বদেশ ও ভারতবাসীকে তাঁদের স্বজন মনে করে ভারতবাসীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ক্রমে মুসলিম শাসকরাও এই ভারতীয়করণের আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হন।
তথ্য সূত্র:
স্বদেশ পরিচয় | জীবন মুখোপাধ্যায়।