দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা | দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি টীকা লেখো
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় দেওয়ানি লাভ (১৭৬৫ খ্রি.) করার পর বাংলার নবাব নজম-উদ্-দৌলার সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানি নবাবকে বার্ষিক ৫৩ লক্ষ টাকা দেবে স্থির হয়। এর ফলে বাংলার নবাবও কোম্পানির ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কোম্পানি একদিকে দেওয়ানি লাভ করে রাজস্ব আদায়ের অধিকারী হয়ে ওঠে, অপরদিকে নবাবকে বৃত্তিভোগীতে পরিণত করে প্রশাসনিক ও সামরিক ক্ষমতা লাভ করে। একই অঞ্চলে এই দুই ধরনের ক্ষমতা লাভ করে সিংহাসনের আড়াল থেকে কোম্পানি যে শাসন পরিচালনা করে তা ‘দ্বৈত শাসনব্যবস্থা’ নামে পরিচিত।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কারণ:
দেওয়ানি লাভের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে বাংলার শাসন ক্ষমতার দখল নিতে চেয়েছিল। কারণ অনভিজ্ঞ ও অল্প কর্মচারী নিয়ে তারা সরাসরি শাসন ক্ষমতায় এসে অন্যান্য ইউরোপীয় বণিক কোম্পানিগুলির ঈর্ষার কারণ হতে চায়নি। তাই কোম্পানি দ্বৈত শাসনব্যবস্থা কায়েম করে।
ফলাফল:
দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
১. এই শাসনব্যবস্থা কায়েম করার পর ব্রিটিশ কোম্পানি বিনা শুল্কে একচেটিয়া বাণিজ্য শুরু করে। দেশীয় শিল্পবাণিজ্য ধ্বংস হয়।
২. অতিরিক্ত রাজস্ব দিতে ব্যর্থ কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।
৩. কোম্পানির অসৎ কর্মচারীরা নিজেদের বা অন্যের নামে বাঁধ, সেতু ও রাস্তা নির্মাণের সুবাদে লক্ষ লক্ষ টাকা কারচুপি করে।
৪. দ্বৈতশাসনের ফলেই বাংলায় দেখা দেয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১৭৭০ খ্রি.), যা বাংলার একতৃতীয়াংশ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়।
তথ্য সূত্র:
ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।