হরপ্পা সভ্যতার সামাজিক জীবন | Social Life of Harappan Civilization
১. শ্রেণীবিভক্ত সমাজ:
শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অস্তিত্ব হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শহরের ঘরবাড়ী ও অন্যান্য উপকরণ দেখে মনে হয় যে, সমাজে শাসক সম্প্রদায়, ধনী ব্যবসায়ী এবং দরিদ্র শ্রমিক ও কারিগরেরা বাস করত। দুর্গ অঞ্চলেই ছিল শাসকদের বাসগৃহ। শহরের দ্বিতল গৃহগুলিতে বাস করত ধনী ও মধ্যবিত্ত বণিক সম্প্রদায় এবং খুপরি জাতীয় ঘরগুলি ছিল শ্রমজীবী দরিদ্রদের বাসস্থান। পণ্ডিতরা অনুমান করেন যে, এই শহরগুলিতে ক্রীতদাসরাও ছিল। তারা দীনহীন কুটিরে বাস করত এবং ফসল মাড়াই, ভারী বোঝা বহন, শহরের জঞ্জাল পরিষ্কার প্রভৃতি কাজ করত। মহেঞ্জোদরো ও হরপ্পা উভয় শহরেরই উত্তর-পূর্ব কোণ, দুর্গপ্রাকার ও শস্যাগারের কাছাকাছি স্থানসমূহে খুপরী-জাতীয় ঘরগুলির অস্তিত্ব শহরে ক্রীতদাস ও দরিদ্র শ্রমজীবীদের উপস্থিতি প্রমাণ করে। কালিবঙ্গন ও লোথালে এ ধরনের কোন খুপরী মেলে নি বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন যে, এই শহরদু'টির শাসকরা হরপ্পা-মহেঞ্জোদরোর শাসকবর্গ অপেক্ষা উদার ছিলেন।
২. খাদ্য, গৃহপালিত পশু ও পোশাক পরিচ্ছদ:
এই সভ্যতা নগরকেন্দ্রিক হলেও তার মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। এখানকার অধিবাসীরা গম, যব, বার্লি, ধান, ফলমূল, তিল, মটর, রাই, মুরগী ও পশুর মাংস এবং মাছ খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করত। গৃহপালিত জন্তুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গরু, মহিষ, ভেড়া, হাতি, শূকর ও ছাগল। বেলুচিস্তানে মাটির নিচে অতি গভীরে ঘোড়ার চিহ্ন মিললেও ঘোড়া কিন্তু সেদিন পোষ মানে নি। সিন্ধুবাসী সূতী ও পশমের বস্ত্র ব্যবহার করত। তারা দেহের ঊর্ধ্বাংশ ও নিম্নাঙ্গ দুইখণ্ড বস্ত্রের দ্বারা আবৃত করত।
নারী-পুরুষ উভয়েই লম্বা চুল রাখত। মেয়েরা সোনা ও রূপোর ফিতে দিয়ে নানা ধরনের খোঁপা করত। তারা নানা ধরনের প্রসাধনসামগ্রী এবং তামা, ব্রোঞ্জ, সোনা, রূপা ও পাথরের তৈরী নানা ধরনের ও নানা আকারের হার, কানের দুল, চুড়ি, মল, কোমরবন্ধ ও মালা ব্যবহার করত।