ভূমিকা:
হরপ্পা সমসাময়িক যুগে মিশর বা মেসোপটেমিয়াতে যে সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল প্যাপিরাস, পোড়ামাটি ও পাথরের বুকে তার লিখিত বিবরণ প্রাগৈতিহাসিক ও পাওয়া যায়। পণ্ডিতরা সেগুলি পাঠ করে তার ইতিহাস রচনা করেছেন। সিন্ধু উপত্যকার সীলমোহর ও বিভিন্ন পাত্রের গায়ে বেশ কিছু লিপি খোদাই করা আছে। সেগুলির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। পণ্ডিতরা তাই বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যথা—ঘরবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ, বাসনপত্র, অস্ত্রশস্ত্র এবং মানুষ, পশুপক্ষী ও দেবদেবীর মূর্তির ওপর ভিত্তি করে হরপ্পা সভ্যতার বিবরণ লিপিবদ্ধ তাম্র-প্রস্তর যুগের করেন। এই কারণে এই সভ্যতাকে প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা বলা হয়।
১. নদীমাতৃক সভ্যতা:
হরপ্পা সভ্যতার যুগে মানুষ লোহার ব্যবহার জানত না। এ সময় পাথরের ব্যবহার কমে আসতে থাকে এবং ব্রোঞ্জ ও তামার ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। পাথরের হাতিয়ার ও সরঞ্জামের পাশাপাশি ব্রোঞ্জ ও তামার ব্যবহারও নদীমাতৃক সভ্যতা চলতে থাকে। তাই এই সভ্যতা তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা। সুমের, আক্কাদ, ব্যাবিলন ও মিশর প্রভৃতি বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মত হরপ্পা সভ্যতাও ছিল নদীমাতৃক সভ্যতা।
২. বিস্তৃতি:
সিন্ধুনদকে কেন্দ্র করে সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা গড়ে ওঠে। কেবলমাত্র সিন্ধু উপত্যকাই নয়—সিন্ধুতট অতিক্রম করে পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান, রাজপুতানা, গুজরাট, সৌরাষ্ট্র এবং নর্মদা উপত্যকার এক বিস্তীর্ণ স্থানে এই সভ্যতা বিস্তৃত হয়েছিল। উত্তরে জম্মু থেকে দক্ষিণে নর্মদা উপত্যকা এবং পশ্চিমে বিস্তৃতি বেলুচিস্তানের মাকরাণ মরু-উপকূল থেকে উত্তর-পূর্বে মীরাট পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি ছিল। পুরো এলাকাটি ছিল একটি ত্রিভূজের মত এবং এর আয়তন হল প্রায় ১৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এলাকাটি প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়ার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বড়।
৩. নগর সভ্যতা:
বর্তমানে হরপ্পা সভ্যতার প্রায় ২৫০টি কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র শহর নামের অধিকারী। নগর-কেন্দ্রগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হল হরপ্পা ও মহেঞ্জোদরো। এই নগরী দু'টির মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৪৮৩ কিলোমিটার। এছাড়া, চাহুদড়ো, কোটদিজি, রূপার, আলমগীরপুর, লোথাল, রংপুর, রোজদি, সুরকোটরা, কালিবঙ্গ, বনওয়ালি প্রভৃতি স্থানে উন্নত নগর জীবনের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।