মাৎস্যন্যায় বলতে কী বোঝ | টীকা লেখো- মাৎস্যন্যায়


মাৎস্যন্যায় বলতে কী বোঝ | টীকা লেখো- মাৎস্যন্যায়

৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার ইতিহাসে এক ঘোরতর দুর্যোগের সৃষ্টি হয় এবং তা স্থায়ী হয় প্রায় দেড়শ’ বৎসর। এ সময় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়— আত্মকলহ, গৃহযুদ্ধ, হত্যা, গুপ্তহত্যা, ঘন ঘন শাসক পরিবর্তন, দুর্বলের ওপর সবল বা দরিদ্রের ওপর ধনীর অত্যাচার, নৈরাজ্য ও অরাজকতা ছিল বাংলার স্বাভাবিক নিয়ম। দেশে কোন সুস্থ বা স্থায়ী প্রশাসন না থাকায় বাহুবলই ছিল শেষ কথা। বৌদ্ধ পণ্ডিত তারানাথ এই অবস্থার বিবরণ দিয়ে লিখছেন—“সারা দেশে কোন রাজা ছিল না। প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, ব্রাহ্মণ, বণিক প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।


এর ফলে সাধারণ লোকের দুঃখ-দুর্দশার সীমা ছিল না।” পুকুরে যেমন বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে ফেলে, বাংলার মানুষেরও ছিল ঠিক ঐ একই অবস্থা। বাংলার এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘মাৎস্যন্যায়’। কেবলমাত্র এই-ই নয়—বাংলার আভ্যন্তরীণ অবস্থার সুযোগ নিয়ে এ সময় শুরু হয়েছিল একের পর এক বৈদেশিক আক্রমণ। আভ্যন্তরীণ অরাজকতা ও বিদেশী আক্রমণ বাংলার জনজীবনকে সীমাহীন নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়। ‘আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ নামক বৌদ্ধগ্রন্থে বাংলার এই অরাজক অবস্থা ও নৈরাজ্যকে উপহাস করে বলা হচ্ছে ‘গৌড়তন্ত্র'।


দেশের এই অবস্থায় বাংলার নেতৃবৃন্দ দেশের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে সম্মিলিতভাবে গোপাল নামে জনৈক প্রতিপত্তিশালী সামন্তরাজাকে বাংলার সিংহাসনে স্থাপন করেন (৭৫০ খ্রিঃ)। বাংলার রাজন্যগণ কর্তৃক বাংলার রাজপদে গোপালের নির্বাচন এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ তাঁরা দেশের স্বার্থে স্বেচ্ছায় গোপালের আনুগত্য মেনে নিয়েছিলেন। গোপালের সিংহাসনারোহণের ফলে বাংলার বুক থেকে ‘মাৎস্যন্যায়’ দূর হয় এবং বাংলার ইতিহাসে নবযুগের সূত্রপাত ঘটে। তিনি হলেন পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর প্রধান কীর্তি হল বাংলায় শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। মৃত্যুর পূর্বে তিনি নিশ্চয়ই সমগ্র বাংলায় তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেন।


তথ্য সূত্র:

১. স্বদেশ পরিচয় - জীবন মুখোপাধ্যায়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال

×