মগধের উত্থানের কারণ আলোচনা করো | মগধের উত্থান
আর্যাবর্তে রাজনৈতিক প্রাধান্য লাভের সংগ্রামে মগধের সাফল্য অর্জন কোন আকস্মিক বা দৈবী ঘটনা নয়। এ প্রসঙ্গে ডঃ রাম শরণ শর্মা, ডঃ ব্যাসাম ও ডঃ রোমিলা থাপার কয়েকটি কারণের উল্লেখ করেছেন। বিম্বিসার, অজাতশত্রু, শিশুনাগ এবং মহাপদ্ম নন্দের মত সমরকুশলী ও উদ্যমী নেতৃবৃন্দ এবং বাস্সাকর, কৌটিল্য ও রাধাগুপ্তের মত ভারত বিখ্যাত কুটনীতিবিশারদ মন্ত্রীদের ভূমিকাকে কোনক্রমেই উপেক্ষা করা চলে না।
রাজন্যবর্গের ব্যক্তিগত কুশলতা সর্বাংশে ব্যর্থ হত, যদি না মগধের ভৌগোলিক অবস্থান অনুকূল হত। গঙ্গা, শোণ ও চম্পা নদীবেষ্টিত মগধ ছিল অতি সুরক্ষিত। মগধের প্রথম রাজধানী রাজগৃহ পাঁচটি পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় খুবই নিরাপদ ছিল। গঙ্গা, শোণ ও গণ্ডক নদীর সংগমস্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র কার্যতঃ দুর্ভেদ্য ছিল। পাটলিপুত্র ছিল একটি জলদুর্গ বিশেষ এবং সে যুগে এই নগরটিকে অধিকার করা আদৌ সহজসাধ্য ছিল না।
চতুর্দিকে নদী থাকায় শত্রুদ্বারা পাটলিপুত্রের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যেমন ছিল খুবই কম, তেমনি নদীপথ ধরে মগধের সেনাবাহিনী অবাধে চতুর্দিকে চলাফেরা করতে পারত। মগধের পূর্বাঞ্চলে ছিল হস্তিসংকুল ঘন অরণ্য। এই অরণ্য ভেদ করে শত্রুর পক্ষে মগধ
আক্রমণ করা দুঃসাধ্য ছিল, কিন্তু ঐ অরণ্য থেকেই হস্তি সংগ্রহ করে নন্দরাজারা বিশাল রণহস্তীবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। গঙ্গা নদী ছিল মগধের হৃদপিণ্ড।
গঙ্গা ও অন্যান্য নদীগুলি মগধকে উর্বরা এবং সুজলা সুফলা করেছিল। এই নদীর ওপর একচ্ছত্র অধিপত্যের ফলে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা মগধের পক্ষে সহজতর হয়েছিল এবং এই নদীর মাধ্যমেই মগধের বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। খনিজ সম্পদে পূর্ণ মগধের লোহার খনিগুলি ছিল মগধের সামরিক শক্তির প্রধান সহায়।