পালরাজা দেবপালের কৃতিত্ব আলোচনা করো
ধর্মপালের মৃত্যুর পর তাঁর যোগ্য পুত্র দেবপাল সিংহাসনে বসেন। তিনি পিতার মতই বীর ও রণকুশলী ছিলেন। বাদাল স্তম্ভ লিপি-তে তাঁকে উত্তরে হিমালয় থেকে বিন্ধ্যপর্বত এবং পূর্ব সাগর থেকে পশ্চিম সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত সমগ্র উত্তর ভারতের অধীশ্বর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর আদর্শ ছিল ‘সকলোত্তরপথনাথ’ হওয়া এবং একাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর ব্রাহ্মণ মন্ত্রী দর্ভপাণি ও তাঁর পৌত্র কেদার মিশ্র। তিনি উৎকল, হুন, গুর্যর, দ্রাবিড় ও কম্বোজদের পরাজিত করেন এবং প্রাগজ্যোতিষ বা কামরূপের রাজা বিনা যুদ্ধে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁর কাছে পরাজিত গুর্জর-রাজ হলেন মিহিরভোজ বা প্রথম ভোজ। পরাজিত দ্রাবিড়-রাজ হলেন রাষ্ট্রকূট অধিপতি অমোঘবর্ষ।
অনেকে আবার এ প্রসঙ্গে, পাণ্ড্যরাজ শ্রীমার-শ্রীবল্লভের নাম করে থাকেন। তাঁর আমলে পাল সাম্রাজ্যের গৌরব চরমে পৌঁছায়। পূর্বে আসাম থেকে পশ্চিমে কাশ্মীর সীমান্ত ও পাঞ্জাব এবং উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বিন্ধ্যপর্বত পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার-এর মতে, বিন্ধ্যের দক্ষিণে কর্ণাটক ও পাণ্ড্য রাজ্য পর্যন্ত তিনি জয় করেন। আরব পর্যটক সুলেমান তাঁর সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ভারতের বাইরে সুবর্ণদ্বীপ—অর্থাৎ সুমাত্রা, যবদ্বীপ, মালয় দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তাঁর খ্যাতি বিস্তৃত হয়।
জাভা ও সুমাত্রার শৈলেন্দ্রবংশীয় রাজা বালপুত্রদেব নালন্দায় একটি বৌদ্ধমঠ প্রতিষ্ঠার জন্য দেবপালের কাছে পাঁচটি গ্রাম ভিক্ষা করেন এবং দেবপাল তা মঞ্জুর করেছিলেন। তিনি বিদ্যা ও বিদ্বানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করে এবং তাঁর চেষ্টায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার-এর মতে—“ধর্মপাল ও দেবপালের রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা মহান যুগ।”
তথ্য সূত্র:
১. স্বদেশ পরিচয় - জীবন মুখোপাধ্যায়।