পাল ও সেন যুগের সমাজ সংষ্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো


পাল ও সেন যুগের সমাজ সংষ্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো

ভূমিকা:

পাল ও সেন রাজাদের প্রায় পাঁচশ' বছরের শাসনকাল বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি—এই যুগে বাঙালী জীবনের সর্বক্ষেত্রেই কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।

১. সমাজ:

আর্য-প্রভাব সত্ত্বেও পালযুগে বাংলার সমাজ জীবনে আর্যদের চতুর্বর্ণ-ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত হয়নি। পালযুগে বাংলার সমাজে বর্ণপ্রথার অস্তিত্ব ছিল। সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ ও সর্বনিম্ন ম্লেচ্ছ বা অন্ত্যজ ছাড়া সমাজের বাকী সকলেই ছিল শূদ্রবর্ণের। সেনযুগে বর্ণপ্রথার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ভবদেব ভট্ট, জীমূতবাহন, শূলপাণি প্রভৃতি ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রকাররা বর্ণভেদের নিয়ম-কানুন ও আচার-আচরণ তৈরী করেন। সমাজে ব্রাহ্মণদের স্থান ছিল সবার ওপরে। 

২. নারীর মর্যাদা:

পাল-সেন যুগের সমাজে উচ্চশ্রেণীর নারীদের মধ্যে পর্দাপ্রথা প্রচলিত ছিল। সমকালীন বিভিন্ন সাহিত্যে বাংলার নারীদের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। তাঁরা ছিলেন সুভাষিণী, মৃদু স্বভাবা, সুন্দরী ও পতি-অনুগতা। একটি পত্নী-গ্রহণই সে-যুগের নিয়ম হলেও রাজপরিবার, অভিজাত সম্প্রদায় ও ব্রাহ্মণদের মধ্যে বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল। বাল্যবিবাহের ফলে নারীরা উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। উচ্চবংশের নারীরা লেখাপড়া শিখতেন এবং সংগীত, চিত্রাঙ্কন, ললিতকলা ও নৃত্যগীতে নিপুণতা অর্জন করতেন। গৃহের অভ্যন্তরে নারী সর্বেসর্বা ছিলেন। স্ত্রীকে পরিত্যাগ করলে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীকে নিতে হত।  

৩. পোশাক-পরিচ্ছদ ও খাদ্য:

পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যে কোন আড়ম্বর ছিল না। পুরুষ ও নারীরা সাধারণতঃ সূতীর ধুতি ও শাড়ী ব্যবহার করত। কখনো কখনো তারা উত্তরীয় ও ওড়না ব্যবহার করত। বাঙালী মেয়েরা চোখে কাজল, খোঁপায় ফুল, গায়ে চন্দনের গুঁড়ো ও পায়ে আলতা ব্যবহার করত। বিবাহিতা নারীরা হাতে শাঁখা ও কপালে টিপ পরত। সঙ্গতিবান পুরুষদের মধ্যে খড়ম, বাঁশের লাঠি ও ছাতা ব্যবহারের প্রচলন ছিল। নারী-পুরুষ উভয়েই সোনা, রূপা, হীরা, মুক্তা প্রভৃতির অলংকার ব্যবহার করত। অঙ্গুরীয়, কন্ঠহার, বালা, মল, দুল, মেখলা এবং মূল্যবান পাথর ও মণিমুক্তাখচিত অলংকারের প্রচলন ছিল। বর্তমানের মত সেদিনও বাঙালীর প্রধান খাদ্য ছিল ভাত, ডাল, মাছ, মাংস, সব্জী, ফলমূল, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রী। মাদকপান নিন্দনীয় হলেও তার ব্যাপক প্রচলন ছিল। বাংলার নলেন গুড় ও চিনি বিখ্যাত ছিল।


তথ্য সূত্র:

১. স্বদেশ পরিচয় - জীবন মুখোপাধ্যায়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×