ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ক্যালভিনের ভূমিকা/অবদান আলোচনা করো | ক্যালভিনবাদ বলতে কী বোঝ
ভূমিকা:
জন ক্যালভিন ছিলেন গোঁড়া প্রোটেস্ট্যান্ট। জন ক্যালভিন ১৫০৯ খ্রি. ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গির্জাবিরোধী ধর্মমতে ক্ষুব্ধ হন ফরাসি সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস। রাজরোষ থেকে বাঁচার জন্য এরপর ক্যালভিন জেনিভায় আশ্রয় নেন। সুদীর্ঘ ২৮ বছর ধরে সুইজারল্যান্ডের জেনিভা থেকেই তিনি প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের প্রচার চালান।
ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ক্যালভিনের অবদান
ক্যালডিনবাদ:
ক্যালভিনবাদের মূল লক্ষ্য ছিল সুশৃঙ্খল মানবজীবন গঠন। তিনি বলতেন মানুষকে আদর্শ জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। তাঁর মতবাদে বলা হয় বাইবেল-বহির্ভূত কোনো নিয়মকানুন গির্জাগুলিতে প্রবর্তিত হওয়া উচিত নয়। ক্যালভিনের শিষ্যরা ক্যালভিনবাদী নামে পরিচিত। ক্যালভিনবাদীদের জন্য বিলাসপূর্ণ জীবনযাপন, আনন্দ উৎসবে যোগদান, থিয়েটারে অভিনয় এবং জমকালো পোশাক পরিধান নিষিদ্ধ ছিল। ক্যালভিনবাদীরা ফ্রান্সে ‘হিউগেনট’, স্কটল্যান্ডে ‘প্রেবিটারিয়ান’ এবং ইংল্যান্ডে ‘পিউরিটান' নামে পরিচিত ছিলেন। "
অবদান:
ক্যালভিন মূলত ধর্মীয় সংস্কারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি গির্জার ওপর রাজা-মহারাজা বা ধনীদের কর্তৃত্ব স্বীকার করেননি। রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার কথা বলেন তিনি। গির্জা ও যাজকদের প্রকৃত রূপ তুলে ধরার জন্য তিনি রচনা করেন ইন্সটিটিউটস্ অব্ দ্য ক্রিশ্চিয়ান রিলিজিয়ান’ (১৫৩৬ খ্রি.)।
ক্যালভিন তাঁর মতবাদের দ্বারা গির্জাকে সবদিক থেকে কলুষমুক্ত করে এক উদার ধর্মীয় ভাবধারার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন। এর ফলে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশে গির্জাবিরোধী সংস্কার আন্দোলন আরও গতিশীল হয়ে ওঠে।
মূল্যায়ন:
জন ক্যালভিন নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে ধর্মের প্রসার ঘটানোর কথা প্রচার করেছিলেন। তাঁর অদম্য প্রচেষ্টার জন্যই পরবর্তী সময়ে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমত আরও বেশি মাত্রায় উদার হয়ে উঠেছিল। ক্যালভিন তাঁর মতবাদের দ্বারা খ্রিস্টানদের ব্যক্তিগত জীবনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তথ্য সূত্র:
অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস শিক্ষক | জে মুখোপাধ্যায়।
Tags
শিক্ষামূলক