মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব কী | মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাবে কী কী বলা হয়েছিল
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মার্চ লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ভারতের বড়লাটের কার্যভার গ্রহণ করেন। বহু চেষ্টা করেও তিনি ভারতের অখণ্ডতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন এবং অবশেষে ৩রা জুন তিনি স্পষ্টভাবে ভারত বিভাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তাঁর এই ঘোষণা বা পরিকল্পনা ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ' নামে পরিচিত।
এই প্রস্তাবে বলা হয় যে,
১. সমগ্র তারতকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু'টি পৃথক ডোমিনিয়নে বিভক্ত করা হবে এবং এই দুই ডোমিনিয়ন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়সমূহ পরিচালনা করবে।
২. মুসলিম-প্রধান প্রদেশ সিন্ধু, বেলুচিস্থান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হবে।
৩. পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করা হবে এবং এই দুই প্রদেশের কোন্ কোন্ অঞ্চল ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে তা নির্ধারণের জন্য একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠিত হবে।
৪. উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও আসামের শ্রীহট্ট জেলা কোন্ ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে তা গণভোট দ্বারা স্থির হবে।
৫. দেশীয় রাজ্যগুলি নিজ নিজ রাজ্যে সার্বভৌম ক্ষমতা পাবে এবং ইচ্ছে করলে তারা যে-কোন ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে।
৬. প্রত্যেক ডোমিনিয়নের নিজস্ব গণ-পরিষদ বা আইনসভা নিজ ডোমিনিয়নের সংবিধান রচনা করবে।
গান্ধীজী, প্যাটেল, আজাদ প্রভৃতি কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ দেশ বিভাগের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন, কিন্তু দাঙ্গার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবে সম্মত হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হলেও জিন্না সম্পূর্ণ খুশী হতে পারেন নি, কারণ তিনি সমগ্র বাংলা ও পাঞ্জাবকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। মাউন্টব্যাটেন ঘোষিত পাকিস্তানকে ‘বিকলাঙ্গ ও কীটদগ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেও তিনি এই প্রস্তাব মেনে নেন।