মধ্যপ্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো | Class 11 History Suggestion


মধ্যপ্রস্তর যুগ | একাদশ শ্রেণী ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর | Class 11 History Long Question Suggestion


ভূমিকা:

প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং নব্যপ্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কাল মধ্যপ্রস্তর যুগ নামে পরিচিত। এককথায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের দ্বিতীয় পর্ব ছিল মধ্যপ্রস্তর যুগ। এই যুগের মানুষের জীবনযাপন ও কৃষিকাজে বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। 


মধ্যপ্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্য বা গুরুত্ব 


১. বাসস্থান:

মধ্যপ্রস্তর যুগেও মানুষ সাধারণত গুহায় বসবাস করত। তবে ঐতিহাসিকদের ধারণা এই সময় কিছু কিছু অঞ্চলে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করা হয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের আদমগড় পাহাড়ের মধ্যে মধ্যপ্রস্তর যুগের বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া যায়।


২. জীবিকা:

পশুশিকার এবং গাছগাছালি থেকে ফল মূল সংগ্রহ ছিল মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা। এ যুগে মানুষ ছিল অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির। এই যুগে মানুষ হরিণ, বনবিড়াল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোটো ছোটো পশুর শিকার করত। শুধু তাই নয়, মানুষরা এইসময় নদী ও সমুদ্র থেকে মাছ ও সামুদ্রিক শামুকও সংগ্রহ করত।


৩. হাতিয়ার:

মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষের হাতিয়ার ব্যবহারে বেশ কিছু পরিবর্তণ এসেছিল অন্যান্য যুগের তুলনায়। এযুগের মানুষেরা তিরধনুক, বড়শি,ব্লেড প্রভৃতি হাতিয়ার ব্যবহার করত। এছাড়া তারা বিভিন্ন পশুর শিং বা হাড় দিয়ে তিরের ফলা তৈরি করত।


৪. পশুপালন:

ঐতিহাসিকদের ধারণা অনুযায়ী, মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষরা পশুপালনও করত। কুকুর ছিল মানুষের প্রথম গৃহপালিত পশু। কুকুর ছাড়াও মানুষ এইসময় গরু, মোষ, ছাগল, বিড়াল প্রভৃতি পশুকে পোষ মানিয়েছিল। 


৫. সামাজিক ঐক্য:

প্রাচীনকাল থেকে মানুষ দলবদ্ধভাবে শিকার করত। মধ্যপ্রস্তর যুগেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। এই পর্বে মানুষেরা নিজেদের খাদ্যের প্রয়োজনে জোটবদ্ধ হয়ে পশু শিকার করত। শুধু পশু শিকার নয় বিভিন্ন হিংস্র পশু ও জন্তুদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যও মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।


৬. যোগাযোগ ব্যবস্থা:

এই যুগে মানু ষযাতায়াত করতে বিভিন্ন স্লেজগাড়ির ব্যাবহার করত। তবে ঐতিহাসিকরা মনে করেন, এই সময় কোনো যানবাহন আবিষ্কৃত হয়নি। এই পর্বে মানুষেরা গাড়ি টানার জন্য কুকুরকে ব্যাবহার করত। এছাড়া নদী ও সমুদ্রপথে যাতায়াতের জন্য তারা গাছের গুঁড়ি কেটে নৌকা হিসেবে ব্যাবহার করত।


৭. চিত্রকলা:

মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষেরা মূর্তি খোদাই এর কাজ শুরু করেছিল। গুহার দেয়াল তারা বিভিন্ন পাথর ও হাড় দিয়ে চিত্রকলা অঙ্কন করত। তারা মানুষ, পশুর ছবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জ্যামিতিক চতুষ্কোণ ও বৃত্তাকার চিত্র অঙ্কনের প্রয়াস করত। 


৮. অস্তিত্বের নিদর্শন:

ভারতবর্ষ থেকে শুরু করে পৃথিবীর বহু জায়গা আছে যেখানে মধ্য প্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে। আমরা যদি ভারতবর্ষের কথা বলি তাহলে, মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকা, রাজস্থানের দিদওয়ালা, মহারাষ্ট্রের নেভামা প্রকৃতি জায়গায় মধ্যপ্রস্তর যুগের নিদর্শনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া ভারতের বাইরে শ্রীলংকা, রাশিয়া, ফিনল্যান্ডের মতো দেশে মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।


মূল্যায়ন:

মানবসভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাসে মধ্য প্রস্তর যুগ ছিল এক পরিবর্তনকামী অধ্যায়। এই যুগে মানুষের বসবাস, হাতিয়ারের ব্যাবহার, পশুশিকার প্রভৃতি নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষ্য বহন করে চলে। মধ্যপ্রস্তর যুগের নানা পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করেই নব্যপ্রস্তর যুগের আগমন ঘটেছিল। সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।


তথ্য সূত্র:

১. উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সহায়িকা 

দাস | পাহাড়ি - Talent Booster

২. প্রান্তিক উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সহায়িকা | সম্পাদনায় শ্রী দেবাশীষ মৌলিক



 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×