কার্ল মার্কসের মতবাদগুলি আলোচনা করো | মার্কসীয় মতবাদ


দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ | ঐতিহাসিক বস্তুবাদ | শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব | উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব | সর্বহারার একনায়কতন্ত্র | রাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব

সূচনা: 

আধুনিক সমাজতন্ত্রবাদের জনক হলেন কার্ল হাইনরিখ মার্কস (১৮১৮-৮৩ খ্রি.)। মার্কসের মতবাদ ‘মার্কসবাদ' নামে পরিচিত। লেনিনের অনুসরণে বলা যায়, মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষাদর্শই হল মার্কসবাদ। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখ্য হল ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ (১৮৪৮ খ্রি.)। এই গ্রন্থে তিনি আধুনিক সমাজতন্ত্রবাদের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন।


 উৎস: 

মার্কসবাদের মূল উৎস উনিশ শতকের জার্মানি, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও দর্শন। মার্কস উদ্বৃত্ত মূল্যের ধারণা পান ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদদের থেকে; শ্রেণিসংগ্রাম, রাষ্ট্র ও বিপ্লবের ধারণা পান ফরাসি সমাজতন্ত্রীদের থেকে এবং দ্বন্দ্ববাদ ও বস্তুবাদের ধারণা পান জার্মান ভাববাদী দার্শনিকদের থেকে।


মার্কসবাদের মূল সূত্র: মার্কসবাদের মূল সূত্রগুলি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মার্কসবাদের মূল সূত্রগুলি হল -

১. দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ: 

এই মতবাদ অনুযায়ী সমস্ত বস্তুর মধ্যে পরস্পরবিরোধী শক্তি রয়েছে। এই দুই শক্তির দ্বন্দ্বের জন্যই সব জিনিসের পরিবর্তন ঘটে। এই পদ্ধতি মেনেই মানবসমাজের পরিবর্তন ও রূপান্তর ঘটে চলেছে।


২. ঐতিহাসিক বস্তুবাদ: 

মার্কসবাদ অনুসারে মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রতিফলিত হয় তার অর্থনৈতিক জীবন। সমাজের সমস্ত কাজ অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন ঘটায়। এই পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখেই সামাজিক ধ্যানধারণা, রীতিনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ধর্ম সব কিছু বদলায়।


৩. শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব: 

মার্কসের মত অনুযায়ী মানবসমাজের ইতিহাস হল আসলে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে শোষক ও শোষিতের মধ্যে এই সংগ্রাম চলে আসছে। শোষক মালিকপক্ষের হাত থেকে শোষিত শ্রমিকপক্ষ মুক্তিলাভের জন্য অবিরত সংগ্রাম চালায়। যতক্ষণ না সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে ততক্ষণ এই সংগ্রাম চলবে।


৪. উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব: 

ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য অনেক বেশি হয়। এই উদ্বৃত্ত মূল্য থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে তা মালিকরা আত্মসাৎ করে। মার্কসবাদে এই তত্ত্বই ‘উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব’ হিসেবে পরিচিত।


৫. সর্বহারার একনায়কত্ব: 

ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শোষণ যত বাড়বে শোষক ও শোষিতের শ্রেণিসংগ্রাম তত তীব্র হবে। শেষপর্যন্ত সর্বহারা বিপ্লবের মাধ্যমে শোষিতরা রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবে, প্রতিষ্ঠিত হবে সর্বহারার একনায়কত্ব।


৬. রাষ্ট্রসম্পর্কিত তত্ত্ব: 

মার্কসীয় তত্ত্ব অনুসারে রাষ্ট্র হল শ্রেণিশোষণের যন্ত্র। সমাজজীবনের সূচনা থেকেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটেনি। আদিম সমাজে রাষ্ট্র ছিল না, কারণ তখন ব্যক্তিগত সম্পত্তির শোষণ বা শ্রেণিসংগ্রাম ছিল না।


তথ্যসূত্র- ইতিহাস শিক্ষক (জে মুখোপাধ্যায়)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×