মৌর্য সম্রাজ্যের পতনের কারণ | মৌর্য সম্রাজ্যের পতন কেন হয়েছিল


মৌর্য সম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো | মৌর্য সম্রাজ্যের পতন কিভাবে হয়

ভূমিকা:

কোনো দেশেই কোনো কালের রাজ্য কিংবা সম্রাজ্যের চিরস্থায়ীত্বের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নেই। বিখ্যাত আরবীয় ঐতিহাসিক ইবন খালদুন তাই লিখেছেন, "প্রতিটি সাম্রাজ্যের জন্ম আছে, উত্থান আছে ও পতনও আছে"। দেশ-কাল ও প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন হয়। ভারতের মৌর্য সম্রাজ্যেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম ছিল না। ২৩২ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মহামতি সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পরেই মৌর্যদের রাজনৈতিক পতন শুরু হয়। 

মৌর্য সম্রাজ্যের পতনের কারণ 


১. সম্রাজ্যের বিভাজন- 

মৌর্য সম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল অশোকের পরবর্তীকালে একের পর এক দুর্বল রাজাদের আবির্ভাব। অশোকের মৃত্যুর পর মৌর্য সম্রাজ্য দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। সম্রাজ্যের পূর্বভাগ দশরথ ও পশ্চিমভাগ কুণালের অধীনে চলে যায়। এই ভাগাভাগি না হলে হয়তো উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে গ্রীক আক্রমণ আরও কিছুদিন ঠেকিয়ে রাখা যেত। ফলে মৌর্যরা তাদের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ পেত।

২. মগধের গুরুত্ব হ্রাস- 

প্রথমদিকে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় সহজেই মগধের উত্থান ঘটেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে মগধের বাইরে নতুন নতুন লৌহখনি আবিষ্কৃত হওয়ায় সেইসব অঞ্চলের বাসিন্দারা লোহার তৈরি অস্ত্রশস্ত্র ও কৃষি সরঞ্জাম ব্যবহারের সুবিধা পেল। এইসব সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠল মধ্য ভারতের শুঙ্গ, কাহ্ন, কলিঙ্গ, চেত দাক্ষিণাত্যের সাতবাহন প্রভৃতি শক্তি এবং মগধের গুরুত্ব হ্রাস পেল। এদের উত্থান মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত করল।

৩. অর্থনীতির স্থিতিবস্থা-

খননকার্যের পর দেখা গেছে, মৌর্য সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের প্রথম যুগের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেই দিক থেকে বলা যেতে পারে মৌর্য অর্থনীতি নানা দিক থেকে আঘাত পেয়েছিল।

৪. প্রশাসনিক দুর্বলতা-

মৌর্যদের শাসনব্যবস্থা আপাতদৃষ্টিতে সুপরিচালিত মনে হলেও কয়েকটি প্রাথমিক দুর্বলতা রয়ে গিয়েছিল। সম্রাটকে কেন্দ্র করে যে আমলাতন্ত্র, তাদের আনুগত্য ছিল সম্রাটের প্রতি। রাজা বদল হলে আনুগত্যেরও বদল হত। নিয়োগের কোনো নির্দিষ্ট রীতি ছিল না।

৫. অশোকের দায়িত্ব- 

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য অনেকেই অশোকের নীতি বা কর্মপন্থাকে প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী করে থাকেন। এই অভিযোগের ভিত্তি প্রধানত দুটি যুক্তি রয়েছে। প্রথমত অশোকের নীতির বৌদ্ধ ঝোঁক উত্তরাধিকারীদের জৈন ঝোঁক ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতিক্রিয়া ডেকে এনেছিল। পুষ্যমিত্র শুঙ্গের বিদ্রোহ ছিল এই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ। দ্বিতীয়তঃ অশোকের শান্তিবাদী নীতি সাম্রাজ্যের শক্তিকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিয়েছিল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

close