ডায়েবেটিস কি? এই রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন
ডায়েবেটিস রোগটি সংক্রামক নয়। তবে এই রোগটির কারণে শরীরে আরও অন্যান্য রোগ বাসা বাঁধতে পারে। আজকাল প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ডায়েবেটিস রোগ দেখা দিচ্ছে। ডায়েবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে উপায় হলো ওষুধ, ব্যায়াম এবং নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা ডায়েবেটিস রোগীর রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে ডায়েবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে কিছু ভুল ধারনা প্রচলিত রয়েছে।
ডায়েবেটিস কি?
ডায়েবেটিস হলো এমন একটি রোগ যা রক্তে গ্লুকোজ বা সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এইসময় মানুষের শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। যার ফলে দেহের সেল বা কোষগুলিতে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না।
ডায়েবেটিসের প্রকারভেদ-
ডায়েবেটিস সাধারণত দুই ধরনের হয়। টাইপ ১ ডায়েবেটিস এবং টাইপ ২ ডায়েবেটিস। তবে বর্তমানে টাইপ ২ ডায়েবেটিস রোগীদের সংখ্যা দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে।
ডায়েবেটিস রোগের লক্ষণ-
কোনো ব্যাক্তি ডায়েবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে তার মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-
১. অতিরিক্ত ক্ষুধা পায়।
২. ঘন ঘন প্রস্রাব পায়।
৩. চোখে ঝাপসা দেখা যায়।
৪. প্রচণ্ড জল তেষ্টা পায়।
৫. দৈহিক ওজনের পরিবর্তন আসে।
৬. মাঝে মাঝে হাত পায়ে ব্যাথা অনুভূত হয়।
৭. একটু কাজ করলেই ক্লান্ত অনুভূত হয়।
ডায়েবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকা-
ডায়েবেটিস একধরনের জেনেটিক রোগ যা মানুষের জীবযাত্রার ধরনের উপর নির্ভরশীল। তবে নিজের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনলে ডায়েবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। কোনো ব্যাক্তি ডায়েবেটিসে আক্রান্ত হলে নিজের খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তনগুলি আনতে পারেন-
১. মসৃণ ও সাদা আটার বদলে ভুসিওয়ালা আটার তৈরি রুটি খেতে হবে।
২. একবারে পেট ভরে না খেয়ে অল্প পরিমাণে কিন্তু বিরতি দিয়ে খান।
৩. সফট ড্রিংকস, কোল্ড ড্রিংকস এবং মিষ্টি জাতীয় পানীয় খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
৪. বেশি পরিমাণে সবুজ শাক সবজি ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
৫. যারা অতিরিক্ত ধূমপান করেন তাদেরকে এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
৬. নিয়মিত শরীরচর্চা ও হাঁটাচলা করতে হবে।
ডায়েবেটিস রোগ সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা-
১. ভাত খাওয়া উচিত নয়-
অনেক মানুষ বলে থাকেন ডায়েবেটিস হলে ভাত খাওয়া উচিত নয়। পরিবর্তে রুটি খাওয়া উচিত। তবে মনে রাখা দরকার ভাত এবং রুটি দুটির মধ্যেই কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই ডায়েবেটিস হলে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া যাবে তবে অবশ্যই পরিমাণমতো।
২. ফল খাওয়া যাবে না-
বহু মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে ডায়েবেটিস হলে ফল খাওয়া যাবে না। কারণ ফলের মধ্যে মিষ্টি রয়েছে। ডায়েবেটিস হলে ফল খাওয়া যাবে। তবে কিছু বেশি মিষ্টি জাতীয় ফল খাওয়া উচিত নয়। যেমন আম, কলা প্রভৃতি। তবে আপেল, পাকা পেঁপে, পেয়ারার মতো ফল খাওয়া যাবে।
৩. দোকানের বিনা চিনির খাবার খাওয়া ভালো-
আমরা অনেকে বাইরের বিনা চিনির প্যাকেট জাতীয় বিভিন্ন খাবার কিনে থাকি। দোকান, মল কিংবা শপের বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটে No sugar বলে লেখা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টো হয়। প্যাকেট গুলিতে চিনির পরিমাণ কম থাকলেও খাবারগুলোতে এমন কিছু পদার্থ থাকে যেগুলি রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, ডায়েবেটিস একটি জটিল ধরনের রোগ। এই রোগ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র সহজ উপায় হলো নিজের জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। তাই এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই নিজের জীবনযাপনে পরিবর্তন আনুন।