ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো | What was the reason for the Quit India Movement

ভূমিকা:

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে গান্ধীজী পরিচালিত সর্বশেষ এবং বৃহত্তম গণ আন্দোলন ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলন। যে আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশে ব্রিটিশ সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারকে ভাবতে বাধ্য করেছিল যে, ভারতীয়দের উপর আর বেশিদিন শাসন করা সম্ভব হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হলে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে এক ক্ষোভ হতাশার সঞ্চার হয়েছিল। আর সেই সময় গান্ধীজির নেতৃত্বে সংঘটিত হওয়া ভারত ছাড়ো আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতির কারণে এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার বেশ কারণ ছিল।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ

. ক্রিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতা:

১৯৪২ সালের ২৩ মার্চ ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতীয়দের সাহায্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে অনেকগুলি প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কিন্তু সেই সকল প্রস্তাবে ভারতকে স্বাধীনতা দানের কোনো উল্লেখ ছিলনা। উপরন্তু প্রস্তাবে ভারতকে টুকরো করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র লুকিয়ে ছিল। তাই গান্ধীজী সহ কংগ্রেস এই প্রস্তাবের চরম বিরোধিতা করেন।

. জাপানি আক্রমণ:

ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ নিলে জাপান ভারতবর্ষে আক্রমণ করতে পারে। এই সম্ভাবনায় ভারতীয়রা আশান্বিত হতে থাকে। তাই গান্ধীজী সহ তার অনুগামীরা ব্রিটিশ সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলনের পথে পা বাড়ান।

. ব্রিটিশ সৈনিকদের অত্যাচার:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধরত দেশগুলিতে বসবাস করা ভারতীয়দের উপর ব্রিটিশ সেনায় নিযুক্ত সদস্যরা চরম অত্যাচার করতে শুরু করে। যার ফলে ব্রিটিশদের প্রতি ভারতীয়দের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

. খাদ্যসংকট মূল্যবৃদ্ধি:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তর পরিস্থিতিতে মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়। শুধু তাই নয় মানুষের মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকটের আকাঙ্খা দেখা দেয়। তার ওপর সমাজে দুর্নীতি কালোবাজারি আরও বেড়ে যায়। এমন পরিস্থতিতে ভারতীয়রা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে। এবং তাদের শাসনের অবসান কামনা করে।

. অন্যান্য আন্দোলনের প্রভাব:

অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০) সহ আরও বিভিন্ন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ভারতীয়দের মনে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করতে সাহায্য করে। যার ফলে ভারতবাসী ব্রিটিশ সরকারের অবসান ঘটাতে এক বৃহৎ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়।

আন্দোলনের সূচনা:

১৯৪২ সালের ১৪ জুলাই কংগ্রেস কার্যনির্বাহী কমিটি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাবটি গ্রহণ করে। গান্ধীজী এই সময় 'হরিজন' পত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানান, "জাপানি আক্রমণ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে, ভারতবাসীর বিরুদ্ধে নয়। অর্থাৎ ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করলে জাপানি আক্রমণ বন্ধ হয়ে যাবে।" গান্ধীজী এই আন্দোলনের সময় তার বিখ্যাত স্লোগান "কারেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে"(Do or Die) বলেছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×