চীনে তুং চি পুনঃপ্রতিষ্ঠা | তুংচি পুনঃস্থাপন কি প্রকৃত পুনঃস্থাপন ছিল | History Honours

চীনে  তুং চি পুনঃপ্রতিষ্ঠা | তুংচি পুনঃস্থাপন কি প্রকৃত পুনঃস্থাপন ছিল

চীনে তুং চি পুনঃপ্রতিষ্ঠা | তুংচি পুনঃস্থাপন কি প্রকৃত পুনঃস্থাপন ছিল | History Honours


১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে চীন যখন ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সাথে পিকিং স্বাক্ষর করে তখন মাঞ্চু রাজতন্ত্রের পুরোপুরি ভগ্নদশা। ব্রিটিশ ও ফরাসী সৈন্যরা মাঞ্চ রাজাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ অগ্নিদগ্ধ করেছিল। তার ওপর চীনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন রাজতন্ত্রবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। বিশেষত তাইপিং বিদ্রোহীরা চীনের বিরাট অংশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছিল। চীনের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দ্রুত অবক্ষয়ের পথে ধাবিত হচ্ছিল।


কিন্তু ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ-এর পরবর্তী বছরগুলিতে বিলুপ্তপ্রায় রাজশক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটা আন্তরিক প্রয়াস চালানো হয়েছিল। রাজশক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে মূল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল চীন সম্রাট তুং চির রাজত্বকালে (১৮৬২-১৮৭৪)। তাই সমসাময়িক চীনা পণ্ডিতেরা এই প্রক্রিয়াকে তুং চি পুনঃপ্রতিষ্ঠা (Tung Chi Restoration) নামে আখ্যায়িত করেছিলেন। বস্তুত পুনঃপ্রতিষ্ঠার অর্থ ছিল রাজতন্ত্রের দ্রুত অবক্ষয়ের প্রক্রিয়াকে সাময়িক ভাবে স্তব্ধ করা। 


চীনের রাজতান্ত্রিক কর্তৃত্ব চূড়ান্তভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার আগে এই পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষবারের মত প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল। রাজশক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াসের ওতপ্রোত অনুষঙ্গ হিসাবে এসেছিল চীনকে সামরিক ভাবে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টাকেই ঐতিহাসিকেরা বলেছেন "আত্মশক্তির আন্দোলন" বা Self Strengthening Movement যদিও রাজশক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালানো হয়েছিল সম্রাট তুং চি-র রাজত্বকালে, কিন্তু এই ব্যাপারে স্বয়ং তুং চি-র কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল না। কারণ যখন তিনি সম্রাট পদে বসেন, তখন তাঁর বয়স ছিল অত্যন্ত কম।  


প্রকৃতপক্ষে তাঁর মা বিধবা সম্রাজ্ঞী সু-শি তাঁর অভিভাবক হিসাবে রাজকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। রাজশক্তির পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সব থেকে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল একদল অত্যন্ত যোগ্য রাজপুরুষ ও আমলার। কেন্দ্রীয় স্তরে এই সব দক্ষ রাজপুরুষদের কৃতিত্বের ফলে চীনের পতনোন্মুখ রাজতান্ত্রিক কর্তৃত্বকে সাময়িকভাবে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। জাঁ শোনো বলেছেন-পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রকৃত কারিগর ছিলেন রাজধানীর এবং বিভিন্ন প্রদেশের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মচারী (The real artisans of the Restoration were a few senior officials in the capital and in the provinces)। রাজধানী পিকিং-এ রাজশক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। 


পূর্ববর্তী সম্রাট সিয়াং ফেং-এর ছোট ভাই রাজকুমার কুং। কুং-কে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন ওয়েন সিয়াং, শেন কুই ফেন, লি তাং সি প্রমুখ। যদিও সে সময়ে পিকিং-এর রাজদরবারে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, তথাপি কুং এবং তাঁর অনুগামীরাই কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রাদেশিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ আমলাদের মধ্যে চেং কুয়ো ফান, জুয়ো জং টাং, লি হাং চাং ছিলেন উল্লেখযোগ্য। প্রথমোক্ত দুই ব্যক্তির শাসনতান্ত্রিক ও সামরিক দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত, তবে লি হাং চাং ছিলেন দুশ্চরিত্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত। তদানীন্তন চীনে রাজতন্ত্র বিরোধী অভ্যুত্থানগুলি দমন করার ক্ষেত্রে এই রাজপুরুষেরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।


তথ্য সূত্র: আধুনিক পূর্ব এশিয়া চীন ও জাপানের ইতিহাস - ড. সিদ্ধার্থ গুহ রায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×