রামমোহন রায় শুধুমাত্র একজন সমাজসংস্কারকই ছিলেন না, শিক্ষাসংস্কারক হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে ভারতবাসীর কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও মানসিক জড়তা দূর করতে পারে কেবল আধুনিক শিক্ষার আলো। এই কারণে তিনি শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও শিক্ষা সংস্কারে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
শিক্ষা সংস্কারে রামমোহনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনের জন্য লর্ড আমহার্স্টের কাছে তাঁর লেখা চিঠি। ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে লেখা এই চিঠিতে তিনি ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য যে এক লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা আছে তা পাশ্চাত্য শিক্ষার জন্য ব্যয় করতে অনুরোধ করেন। রামমোহন এই চিঠিতে প্রাচ্য দর্শন ও ব্যাকরণের শিক্ষার অবাস্তবতা দেখিয়ে পাশ্চাত্যের বাস্তব শিক্ষার পক্ষে যুক্তি দেখান।
রামমোহন যেমন নিজে বিভিন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তেমনি বিভিন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অন্যান্যদের নানারকমভাবে সাহায্যও করেছিলেন। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘অ্যাংলো হিন্দু স্কুল’ নামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। এই বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তিনি কারিগরিবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভলতেয়ার, ইউক্লিড প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেদান্ত কলেজ’।
এই কলেজে প্রাচ্যবিদ্যার সঙ্গে ইউরোপীয় জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু কলেজ স্থাপনে তিনি প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। আলেকজান্ডার ডাফের সহযোগিতায় তিনি 'জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বর্তমানে ‘স্কটিশ চার্চ কলেজ' নামে পরিচিত।
তথ্য সূত্র:
১. ইতিহাস ও পরিবেশ- Password- এ কে এম সরিফুজ্জামান।