ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজির ভূমিকা | Mahatma Gandhi


স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজি | স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীজির অবদান 


ভূমিকা:

ভারতের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এক অবিস্মরণীয় নাম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর কাছে তিনি 'মহাত্মা', জওহরলাল নেহরু-র কাছে '‘আলোর ঝলক’, টাটকা হাওয়ার প্রবল প্রবাহ’ ও ‘সক্রেটিস’ এবং সুভাষচন্দ্র বসু-র কাছে ‘জাতির জনক’


ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজির ভূমিকা:


গান্ধীজির আবির্ভাব:

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কারণ এই বছরেই মহাত্মা গান্ধী জাতীয় কংগ্রেস তথা ভারতীয় জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর আগমনে ভারতীয় রাজনীতি নতুন রূপ পরিগ্রহ করে। 


(১) রাজনীতিকে তিনি ইংরেজী শিক্ষিত মধ্যবিত্তের বৈঠকখানা থেকে দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকের পর্ণকুটীর, কৃষিক্ষেত্র ও কলকারখানায় পৌঁছে দেন এবং তিনি নিজে তাদের কাছের মানুষে পরিণত হন। 


(২) পূর্ববর্তী নেতৃবৃন্দের মতো তিনি তাঁর কর্মপ্রয়াস কেবলমাত্র আইনসঙ্গত বা সাংবিধানিক আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি সরকারের বিরুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু করেন। 


(৩) বিপ্লবীদের সঙ্গেও তাঁর পার্থক্য ছিল। তিনি অহিংস ‘সত্যাগ্রহ’-তে বিশ্বাসী ছিলেন হিংসায় নয়। সত্য ও অহিংসার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রামকে তিনি 'সত্যাগ্রহ' বলে আখ্যা দেন। তাঁর মতে সত্যাগ্রহী অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্যের দ্বারা শান্তিপূর্ণভাবে অনাচারের প্রতিবাদ করবে সে কখনই হিংস্র হয়ে উঠবে না। মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করে অত্যাচারীর হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটানো বা তার অন্তরে শুভ বুদ্ধির জাগরণ ঘটানোই হল সত্যাগ্রহের উদ্দেশ্য। 


(৪) তাঁর সহজ, সরল, অনাড়ম্বর  পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবনযাত্রা, ইংরেজি অপেক্ষা দেশীয় ভাষার প্রতি আকর্ষণ, সাধুসুলভ মাধুর্য, সত্যনিষ্ঠা ও ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি আগ্রহ ভারতীয় জনসাধারণ এবং আদর্শবাদী তরুণ মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীদের তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে। 


(৫) কেবলমাত্র ইংরেজদের রাজনৈতিক অধীনতা থেকে মুক্তিলাভ করাই নয় দেশবাসীকে ‘গান্ধী যুগ’ সর্বপ্রকার শোষণ ও নিপীড়নের হাত থেকে মুক্ত করাই ছিল তাঁর ব্রত। তিনি উপলব্ধি করেন যে, দরিদ্র নিরন্ন গ্রামবাসী ও মহামারী-কবলিত হতশ্রী গ্রামগুলিতেই ভারতের প্রাণশক্তি নিহিত আছে। তাই তাঁর কাছে গ্রামবাসীর দুঃখ-দুর্দশা মোচনের দাবিই হল ভারতের প্রকৃত দাবি। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পক্ষে ও অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম এবং নারীর সামাজিক মর্যাদা উন্নয়নের আদর্শ তাঁকে সকলের - চোখে মহিমান্বিত করে তোলে। 



বুনিয়াদি শিক্ষার বিস্তার, চরকা ও খাদির প্রবর্তন এবং মাদক বর্জনের আদর্শ দেশবাসীকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে। তাঁর নেতৃত্ব, আদর্শ ও কর্মপন্থা ভারতীয় রাজনীতিকে বহুল পরিমাণে শক্তিশালী করে এক নতুন পথে প্রবাহিত করে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও জাতীয় আন্দোলনের মধ্যমণি। এই সময় তাঁকে কেন্দ্র করে তাঁর নেতৃত্ব ও মতাদর্শে জাতীয় আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে। এই কারণে এই যুগ ‘গান্ধী যুগ’ নামে পরিচিত। এই যুগের ইতিহাস তাঁর জীবনের ইতিহাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস।   


দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীজি:

জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের কাণ্ডারী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন এবং আইন ব্যবসা শুরু করেন। ব্যর্থ ব্যারিস্টার গান্ধীজী ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে আইন ব্যবসার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে যাত্রা করেন এবং সেখানেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত হয়। 


জীবিকার অন্বেষণে প্রায় দশ হাজার ভারতীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ী দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস করত। বর্ণবৈষম্যের কারণে এই অঞ্চলে বসবাসকারী ভারতীয়দের কোন নাগরিক অধিকার ছিল না এবং দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকার তাদের ওপর নানা অত্যাচার চালাত গান্ধীজী নিজেও একাধিকবার এই ধরনের অত্যাচারের শিকার হন। এইসব অনাচার দূর করার উদ্দেশ্যে গান্ধীজী ভারতীয়দের সংঘবদ্ধ করে সম্পূর্ণ অহিংস পথে ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনের সূচনা করেন। এই আন্দোলনে তিনি জয়যুক্ত হন (১৯১৪ খ্রিঃ)।এই আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন। দক্ষিণ আফ্রিকায় জয়লাভের ফলে তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৃদ্ধি পায়। ভারতেও তাঁর নেতৃত্বের প্রভাব অনুভূত হয় এবং তাঁর পক্ষে ভারতীয় রাজনীতির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সহজতর হয়। 


তিনটি প্রাথমিক আন্দোলন:

১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ছেচল্লিশ বছর বয়সে বিজয়ী বীররূপে গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে আসেন। এই সময় গান্ধীজী কোন রাজনৈতিক দলে যোগ না দিয়ে তিনটি আঞ্চলিক সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। বিহারের চম্পারণে নীলকরদের অত্যাচারে দরিদ্র কৃষকরা নানাভাবে নিপীড়িত হচ্ছিল গুজরাটের খেড়া জেলার কৃষকদের ওপরেও চলছিল সরকারের লাঞ্ছনা। আমেদাবাদের মিল মজুররা দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছিল। কয়েকজন তরুণ শিক্ষিত সহকর্মীকে নিয়ে গান্ধীজী তিনটি স্থানেই পরপর অহিংস আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনটি আন্দোলনেই তিনি জয়যুক্ত হন। 


এর ফলে জমিদার, মহাজন, নীলকর ও ইংরেজ সরকার সম্পর্কে দরিদ্র শ্রমিক-কৃষকদের ভয় ভাঙতে শুরু করে এবং যুগ যুগ সঞ্চিত জড়তা ও তন্দ্রা থেকে গ্রামগুলি জেগে ওঠে। এই আন্দোলনগুলির মাধ্যমে গান্ধীজী গ্রামের নিরক্ষর দরিদ্র কৃষক, শহরের মজুর ও জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয় ঘটিয়ে জাতীয় আন্দোলনের পরিধি বিস্তৃততর করে। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ভারতীয় রাজনীতি জটিলতর হয়ে ওঠে। জাতীয় কংগ্রেস সেদিন দ্বিধা-বিভক্ত ও নিষ্প্রভ। প্রবীণ নেতৃমণ্ডলীর অনেকেই হয় মৃত বা রাজনীতি থেকে অপসৃত। বিপ্লবীদের হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপে জনসাধারণ বিরক্ত। 


 অসহযোগ আন্দোলন:

জাতীয় জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে গান্ধীজী রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন। তিনি তীব্র ভাষায় কুখ্যাত রাওলাট আইনের সমালোচনা করে দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেন এবং এ সময়েই তিনি সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড তাঁকে তীব্র ব্রিটিশ বিরোধীতে পরিণত করে। 


হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতীক গান্ধীজী খিলাফৎ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় খিলাফৎ অধিবেশনে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন। হিন্দু-মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের ‘বিশেষ অধিবেশনে' অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব পাস হয় এবং ডিসেম্বর মাসে জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে তা পুনরায় অনুমোদিত হয়। 


এই আন্দোলন সারা দেশে তীব্র উন্মাদনার সৃষ্টি করে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গ্রাম-গঞ্জ-শহর-কলকারখানা-চা সর্বত্র এই আন্দোলন পরিব্যপ্ত হয়। বিদেশী পণ্য, প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রভৃতি বয়কটের সঙ্গে চলতে থাকে চরকা, খাদি, জাতীয় শিক্ষা, সালিশী সংগঠন স্থাপন এবং মদ্যপান নিবারণ ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। এই আন্দোলন ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে জনগণের ভীতি দূর করে ভারতবাসীকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য করে। 


অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর সারা দেশে আবার হতাশা নেমে আসে। গান্ধীজী কারারুদ্ধ হন, খিলাফৎ আন্দোলন বন্ধ হয় এবং সারা দেশে আবার হিন্দুমুসলিম বিরোধ শুরু হয়। এ সময় ভারতের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে জাতীয় রাজনীতি আবার কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। জাতীয় কংগ্রেসের -nলক্ষ্য কি এ প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বিরোধ চলছিল। পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে গান্ধীজীর নেতৃত্বে শুরু হয় আইন অমান্য আন্দোলন।


সারা দেশে এক অদ্ভুত উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। গ্রাম-গঞ্জ-শহ সর্বত্র এই আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। নিষ্ঠুর দমননীতি অবলম্বন করেও আন্দোলন বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। আন্দোলনের ব্যাপকতায় সরকার ভীত হয়ে পড়ে কূটকৌশলী ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বানচাল করার উদ্দেশ্যে এই সময় 'সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ঘোষণা করে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। হিন্দু সম্প্রদায়কেও বর্ণহিন্দু ও অনুন্নত হিন্দু দুইভাগে ভাগ করা হয়। এর প্রতিবাদে গান্ধীজী আমরণ অনশন শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ডঃ বি. আর. আম্বেদকার’-এর সঙ্গে তিনি পুণা চুক্তি সম্পাদন করেন (২৫শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খ্রিঃ) এবং হিন্দু সম্প্রদায় বিচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পায়। আইন অমান্য আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ভারতের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম।


ভারত ছাড়ো আন্দোলন:

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতীয় রাজনীতি আবার কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর বিনা অনুমতিতে ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে দিলে দেশময় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অক্ষশক্তিভুক্ত দেশ জাপান তখন দ্রুতগতিতে ভারতের দিকে এগিয়ে আসছে। গান্ধীজী তাঁর বিখ্যাত ‘হরিজন' পত্রিকায় ইংরেজ সরকারকে ভারত ত্যাগের পরামর্শ দেন। তিনি লেখেন যে, ভারতে ইংরেজ সরকারের অস্তিত্বই জাপানকে ভারত আক্রমণে প্ররোচিত করছে। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি ‘ভারত ছাড়’ প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং এই আন্দোলন পরিচালনার সব দায়িত্ব গান্ধীজীর ওপর অর্পিত হয়। গান্ধীজী জাতির উদ্দেশ্যে বলেন “পূর্ণ স্বাধীনতা অপেক্ষা কম কোন কিছুতেই আমি সন্তুষ্ট হব না। আমরা করব অথবা মরব।”--- “করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।” ৮ই আগস্ট গভীর রাতে কংগ্রেস অধিবেশন শেষ হওয়ার  কয়েক ঘন্টার মধ্যেই গান্ধীজী, জওহরলাল, বল্লভভাই প্যাটেল এবং আজাদসহ কংগ্রেসের সকল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।


কেবলমাত্র উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের কংগ্রেস সংগঠন ব্যতীত জাতীয় কংগ্রেস ও তার সমস্ত শাখাকে বেআইনী বলে ঘোষণা করা হয়। গান্ধীজীর ‘হরিজন' পত্রিকাসহ অন্যান্য কয়েকটি পত্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বভারতীয় স্তর থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত কংগ্রেস নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন (৯ই আগস্ট) প্রভাতে নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশিত হলে দেশময় হরতাল, বিক্ষোভ মিছিল ও গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়। দেশের নানা অংশে হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হয়। থানা, ডাকঘর, রেলস্টেশন ও সরকারি অফিস-আদালতের ওপর আক্রমণ চলতে থাকে। নানা স্থানে স্বাধীন জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। সরকার নিষ্ঠুর দমননীতি গ্রহণ করে এবং জনগণের 

ওপর নানা নির্যাতন চলতে থাকে। সরকারী দমননীতির প্রকোপে শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যায়। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এই আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে, মুক্তিসংগ্রামে ভারতের জয় অনিবার্য।


ভারতীয় মুক্তিসংগ্রাম ও জাতীয় জীবনে গান্ধীজীর অবদান অপরিসীম। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিন দশক ধরে তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একছত্র নেতা। এ সময় তাঁর অঙ্গলি হেলনেই জাতীয় আন্দোলন পরিচালিত হত। তাঁর জীবনউপসংহার কাহিনীই হল ভারতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস বা ভারতের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস হল তাঁর জীবন-কাহিনী। নিছক রাজনৈতিক মুক্তি নয় দেশবাসীর চরিত্রগঠন, দেশগঠন ও জাতিগঠন তাঁর কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ কারণেই তিনি মাদক বর্জন, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, হরিজন আন্দোলন ও খাদির প্রবর্তন প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তাঁর কৃতিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশবাসী তাঁকে ‘জাতির জনক’ অভিধায় ভূষিত করেছে। যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল-এর কাছে তিনি 'Old rascal' ('বুড়ো বদমাস’), বড়লাট ওয়াভেল-এর কাছে তিনি ‘একজন ভণ্ড বকধার্মিক বৃদ্ধ রাজনীতিক’ ও ‘বিষাক্ত সৰ্প’ এ সত্ত্বেও অনেকের কাছেই  তিনি ছিলেন 'the most saintly among politicians' ('রাজনীতিকদের মধ্যে যথার্থ সপ্তসুলভ’) বা ‘the most political saint' (‘যথার্থ রাজনৈতিক সন্ন্যাসী')।



তথ্য সূত্র:

স্বদেশ পরিচয়- জীবন মুখোপাধ্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×