ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার ব্যবস্থা | Justice System of Warren Hastings

ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার ব্যবস্থা

ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার ব্যবস্থা | Justice System of Warren Hastings


মোগল যুগের শেষ দিকে দেশব্যাপী অরাজকতার ফলে বিচার ব্যবস্থা এক রকম ভেঙ্গে পড়ে। ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনকালেই বাংলাদেশে প্রথম সুসংহত বিচার-ব্যবস্থার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি বিচার-ব্যবস্থার যে কাঠামো তৈরি করেন সমগ্র ব্রিটিশ যুগ ধরে মোটামুটি তা অপরিবর্তিত ছিল।


ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৭২-৮৫ খ্রিঃ) প্রত্যেক জেলায় (রাজস্ব আদায়কারী) কালেক্টর ও কাজীর অধীনে যথাক্রমে মফঃস্বল দেওয়ানী আদালত ও মফঃস্বল ফৌজদারী আদালত স্থাপন করেন। মফঃস্ফল দেওয়ানী ও মফঃস্বল ফৌজদারী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের জন্য যথাক্রমে কলকাতায় সদর দেওয়ানী আদালত ও মুর্শিদাবাদে সদর নিজামত আদালত স্থাপিত হয়। সপর্ষদ-গভর্নরজেনারেল দেওয়ানী মামলার আপীলের বিচার করতেন। 

মুর্শিদাবাদে ‘নায়েব নাজিম' বা নবাবের প্রতিনিধি সদর নিজামত আদালতের প্রধান ছিলেন। এই বিচারালয়ের ওপর ইংরেজ বিচারকের পরিদর্শনের অধিকার ছিল। এছাড়া, তিনি বিচারসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রবর্তন করেন। তিনি আদালতের মোকদ্দমা-সংক্রান্ত নথিপত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। মফঃস্বল দেওয়ানী আদালত ৫০০ টাকা পর্যন্ত মামলার বিচার করতে পারত—তার বেশী মূল্যের মামলাগুলি সদর দেওয়ানী আদালতের এক্তিয়ার ছিল। 

কাজী ও মুফতি মুসলিম আইনের ব্যাখ্যা করত। বারো বছরের মধ্যে মামলা রুজু না করলে তামাদি হয়ে যেত। তিনি বিচারকদের ফি-এর পরিবর্তে মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে বিচারকদের দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে লোপ পায়। এ সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই যে, তাঁর প্রবর্তিত বিচারব্যবস্থা ভারতে ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করে।


কর্ণওয়ালিশের আমলে (১৭৮৬-৯৩ খ্রিঃ) বিচার ব্যবস্থায় আরও উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। তিনি 


(১) সদর নিজামত আদালত কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন। সপর্ষদ-গভর্নরজেনারেলের হাতে তার বিচার ভার অর্পিত হয়। 


(২) জেলার ফৌজদারী আদালত তুলে দিয়ে তিনি কলকাতা, ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও পাটনায় চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠিত করেন।দু’জন ইংরেজ বিচারক কাজী ও মুফতী-কে সংগে নিয়ে প্রতি জেলায় বছরে দু’বার আদালত বসাতেন। এই সব আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সদর নিজামত আদালতে আপীল করা যেত। 


(৩) দেওয়ানী বিচারের ক্ষেত্রে তিনি কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ঢাকা ও পাটনায় চারটি প্রাদেশিক আদালত স্থাপন করেন। প্রাদেশিক আদালতগুলির রায়ের বিরুদ্ধে সদর দেওয়ানী আদালতে আপীল করা যেত। 


(৪) সদর দেওয়ানী আদালতের অধীনে তিনি পর্যায়ক্রমে প্রাদেশিক, জেলা, রেজিস্ট্রারের আদালত ও মুন্সেফী আদালত স্থাপন করেন। মুন্সেফের আদালত ছিল সর্বনিম্ন আদালত। সেখানে ৫০ টাকা পর্যন্ত মামলার বিচার হত। এই আদালত মুন্সেফ ও আমীন দ্বারা পরিচালিত হত। এর ওপরে ছিল রেজিস্ট্রারের আদালত এবং তা একজন ইওরোপীয় দ্বারা পরিচালিত হত। এখানে ২০০ টাকা পর্যন্ত মামলার বিচার চলত। এর ওপরে ছিল জেলা আদালত ও প্রাদেশিক আদালত।


তথ্য সূত্র:

স্বদেশ পরিচয়-জীবন মুখোপাধ্যায়।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×