ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার সংস্কার
ভূমিকা:
মোগল যুগের শেষ দিকে ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে বিচারব্যবস্থা একরকম ভেঙে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস বিচারব্যবস্থার আমূল সংস্কারসাধন করেন।
ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার সংস্কার:
হেস্টিংস বিচারব্যবস্থার যেসব সংস্কারসাধন করেন সেগুলি হল—
১. দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন:
তিনি প্রতিটি জেলায় একটি করে দেওয়ানি আদালত ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন করেন। দেওয়ানি বিচারের ভার থাকে কালেক্টরদের হাতে। ফৌজদারি বিচারের ভার থাকে দেশীয় বিচারকদের ওপর।
২. সদর দেওয়ানি ও নিজামত আদালত স্থাপন:
জেলা আদালতের আপিল বিচারের জন্য কলকাতায় সদর দেওয়ানি আদালত ও সদর নিজামত আদালত স্থাপিত হয়। সদর দেওয়ানি আদালতে মামলার বিচার করতেন গভর্নর-জেনারেল ও তাঁর পরিষদের দুজন সদস্য। সদর নিজামত আদালতের প্রধান বিচারপতি বাংলার নবাব দ্বারা মনোনীত হতেন।
৩. বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা:
ওয়ারেন হেস্টিংস বিচারকদের উপঢৌকন ও ঘুষ গ্রহণ বাতিল করেন এবং ন্যায়বিচারের জন্য তাদের নিয়মিত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
৪. সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠা:
হেস্টিংসের আমলে রেগুলেটিং অ্যাক্ট (১৭৭৩ খ্রি.) অনুযায়ী ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫. অন্যান্য সংস্কার:
বিচারকার্যের উন্নয়নের জন্য হেস্টিংস —
১. আদালতের কার্যাদির বিবরণ লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করেন।
২. আদালতে অভিযোগ উত্থাপনের সময় নির্দিষ্ট করেন।
৩. 'চৌথ’ ও ‘গুরু’ অর্থদণ্ড বাতিল করেন;
৪. তাঁর নির্দেশে দশজন হিন্দু পণ্ডিতের সাহায্যে হিন্দু আইন বিধি সংকলন করা হয়।
তথ্য সূত্র:
মাধ্যমিক ইতিহাস শিক্ষক- জি.কে. পাহাড়ী।