মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে জায়গিরদারী সংকট কতটা দায়ী ছিল

 


জায়গিরদারী সংকট কী | মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে জায়গিরদারী সংকট 



মুঘল যুগে মনসবদারদের নগদ বেতনের পরিবর্তে জায়গির দান করা শুরু হয়। এরই ফলশ্রতিতে যে সংকট দেখা দেয় তা, জায়গিরদারী সংকট নামে পরিচিত। 


জায়গিরদারী সংকট সৃষ্টির কারণ:


জায়গিরদারি সংকট সৃষ্টির অন্যান্য কয়েকটি কারণ ছিল— 

১. জায়গিরদারদের রেষারেষি ও স্বার্থপরতা: মোগল রাজত্বের শেষের দিকে জায়গির লাভের জন্য মনসবদারদের মধ্যে চরম দলাদলি শুরু হয়। দক্ষিণি অভিজাতরা নিম্নমানের মনসব পাওয়ায় ঔরঙ্গজেবের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। এ ছাড়াও জায়গিরের ওপর জায়গিরদারদের অধিকারের স্থায়িত্ব না থাকায়, অর্থাৎ কয়েক বছর ছাড়া ছাড়া জায়গিরদারদের অন্যত্র বদলি করে দেওয়ায় জায়গিরদারি সংকট তীব্র হয়ে ওঠে।


২. জমা ও হাসিলের তফাৎ: 

অনেক ক্ষেত্রে জায়গিরদারগণ নিজেরা রাজস্ব আদায় না করে তাদের জায়গির ব্যবসায়ী বা মহাজনদের ইজারা দিত। এতে দরিদ্র কৃষকের ওপর অত্যাচার ও শোষণের মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। কৃষকরা কৃষিকাজ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। ফলে ওই সকল জায়গিরের জায়গিরদারগণ জমা (কাগজে-কলমে দেখানো রাজস্ব) ও হাসিলের (আদায়িকৃত প্রকৃত রাজস্ব) মধ্যে সামঞ্জস্যবিধানে ব্যর্থ হলে জায়গিরদারি সংকট ভয়াবহ হয়ে ওঠে।



জায়গিরদারী সংকটের দায়িত্ব:

ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালের শেষের দিক থেকে জায়গিরদারি সংকট যে তীব্র হয়ে উঠতে শুরু করে তার নমুনা মেলে স্যার সৈয়দ নুরুল হাসানের ‘জায়গিরদারি ক্রাইসিস ইন মোগল ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে।


১. সংকটের সূচনা: 

মোগল শাসনের শেষের দিকে মনসবদারদের সংখ্যা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেলেও জায়গিরের সংখ্যা বৃদ্ধি না পাওয়ায় জায়গিরকে কেন্দ্র করে তীব্র সংকট দেখা যায় যা মোগল সাম্রাজ্যের পতনে সাহায্য করে।


২. সাম্রাজ্যে দুর্নীতির সূচনা: 

জায়গির লাভকে কেন্দ্র করে মনসবদারদের মধ্যে দলাদলি চরমে পৌঁছোয়। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে জায়গিরদারদের মধ্যে সংগঠিত এই রেষারেষি সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দিয়েছিল।


৩. উৎপাদন হ্রাস: 

নথিভুক্ত জায়গিরদাররা ব্যবসায়ী ও মহাজনদের জায়গির ইজারা দেবার ফলে অধিক মুনাফার আশায় এইসব মধ্যস্বত্বভোগী কৃষকদের ওপর যথেচ্ছ অত্যাচার চালাত। ফলে বহু কৃষক কৃষিকার্য পরিত্যাগ করলে উৎপাদন ব্যাহত হয়।


৪. সেনাবাহিনীর শক্তিহীনতা: 

বেশিরভাগ জায়গিরের আয় মনসবদারদের বেতনের থেকেও কম হওয়ায় মনসবদাররা তাদের নির্ধারিত সেনা বা অশ্ব রাখত না। এতে প্রয়োজনের সময় মনসবদারদের থেকে সামরিক সাহায্য পাওয়া যেত না। ফলে সেনাবাহিনী শক্তিহীন হয়ে পড়ে।


মন্তব্য: 

জায়গিরদারি সংকটের দরুন বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির জন্ম হয়েছিল যা সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে। ড. ইরফান হাবিবের মতে—“জায়গিরদার ও ইজারাদারদের অমানবিক শোষণে মোগল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।”


তথ্য সূত্র:

মাধ্যমিক ইতিহাস শিক্ষক- জি. কে. পাহাড়ী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×