শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ | অবদান বা ভূমিকা | ইলিয়াস শাহী বংশ
লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে ইখতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ-বিন-বখতিয়ার খলজী পশ্চিম ও উত্তর বাংলা জয় করে বাংলাকে মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। সেন বংশের পতনের পর সমগ্র বাংলা দিল্লী সুলতানীর অধীনে আসে। বলা বাহুল্য, সমগ্র সুলতানী যুগে বাংলায় মুসলিম আধিপত্য কখনই সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয় নি। ইলতুৎমিস, বলবন, খলজী ও তুঘলক শাসনাধীনে বাংলায় বারংবার বিদ্রোহ দেখা দেয়। মহম্মদ বিনতুঘলকের রাজত্বকালে পূর্ববঙ্গের শাসনকর্তা ফকরউদ্দিন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ফিরোজ তুঘলক দু’বার চেষ্টা করেও বিদ্রোহ দমন করতে পারেন নি এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলাকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হন। এই রাজ্যের প্রথম বিখ্যাত নরপতি শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ।
বাংলায় ইলিয়াস শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শামউদ্দিন ইলিয়াস শাহ (১৩৪২-৫৭ খ্রিঃ)। ডঃ যদুনাথ সরকার বলেন যে, “লক্ষ্মণাবতীর সিংহাসনে ইলিয়াস শাহের আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা হয়। ডঃ নুরুল হাসান বলেন “ইলিয়াস শাহ বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবময় যুগের সূচনা করেন।” তিনি বাংলার তিনটি অংশকে একত্র করে একটি শক্তিশালী রাজ্য স্থাপন করেন। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি নেপাল আক্রমণ করেন এবং রাজধানী কাঠমাণ্ডু লুণ্ঠন করে প্রচুর ধনরত্নসহ বাংলায় ফিরে আসেন। তিনি উড়িষ্যা ও ত্রিহুত (উত্তর বিহার) রাজ্যকে করদ রাজ্যে পরিণত করে বারাণসী পর্যন্ত তাঁর আধিপত্য বিস্তৃত করেন।
তিনি কামরূপ আক্রমণ করেন, কিন্তু এর ফলাফল সম্পর্কে ঐতিহাসিকেরা একমত নন। ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন বাংলাকে জয় করার উদ্দেশ্যে দিল্লীর সুলতান ফিরোজ তুঘলক ৯০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে বাংলা আক্রমণ করেন। দিল্লীর সেনাদলকে কোন বাধা না দিয়ে ইলিয়াস শাহ সপরিবারে দিনাজপুরের একডালা দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। নদীবেষ্টিত এই দুর্গটি কার্যত দুর্ভেদ্য ছিল। কয়েকমাস অবরোধের পরেও ফিরোজ তুঘলক বাংলার নবাবের কোন ক্ষতি করতে পারেন নি–বরং বাংলার প্রবল বর্ষণ ও মশার কামড়ে সুলতানের সেনাবাহিনী ও ঘোড়াগুলি অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং তিনি দিল্লী ফিরে যেতে বাধ্য হন। ইলিয়াস শাহের রাজত্বকালে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শিল্প, সাহিত্য ও স্থাপত্যের উন্নতির জন্যও তাঁর শাসনকাল স্মরণীয়।
তথ্য সূত্র:
স্বদেশ পরিচয় | জীবন মুখোপাধ্যায়।