মৌর্য যুগে অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। কৃষিই ছিল অধিকাংশ লোকের জীবিকা ও সরকারী আয়ের প্রধান উৎস। মৌর্যযুগে রাজাই দেশের সব জমির মালিক হলেও ব্যক্তিগত মালিকানাও স্বীকৃত ছিল এবং কৃষক বংশানুক্রমিকভাবে সেই জমি চাষ করত। বিজিত অঞ্চল, অকর্ষিত বা পতিত-জমি উদ্ধার করে কৃষিকার্য ও বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা সরকারের অন্যতম কর্তব্য বলে বিবেচিত হত। এই সব কাজে শূদ্রদের নিযুক্ত করা হত।
কৃষকদের ব্যক্তিগত জমি থেকে উৎপন্ন-ফসলের এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-ষষ্ঠাংশ রাজাকে ‘কর’ বা ‘ভাগ’ হিসেবে দিতে-হত। রাজার খাস জমিকে ‘সীতা’ বলা হত। সীতা জমিতে রাজা শূদ্র প্রজা বসাতেন, কিন্তু মালিকানা থাকত রাজার। কৃষক এই জমির উৎপন্ন ফসলের এক-পঞ্চমাংশ পেত এবং বাকীটা ছিল রাজার। অনেক সময় শাসনকার্যের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে রাজা ‘বলি’ বা অতিরিক্ত ভূমি রাজস্ব আদায় করতেন।
সরকার সেচের দিকে যথেষ্ট দিত এবং এজন্য পৃথক কর আদায় করত। মৌর্যযুগে উৎপন্ন ফসলের মধ্যে ছিল নানা জাতের ধান, গম, যব, সরষে, ভুট্টা, আখ ও নানা ধরনের ফলমূল। কৃষিকার্যের জন্য গো-প্রজননের ব্যবস্থাও এই যুগে ছিল। পরবর্তীকালে বিদেশী আক্রমণের যুগেও কৃষির এই উন্নত অবস্থা বজায় ছিল। পশুপালন এই যুগের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি ছিল।