মগধ তথা ভারতের ইতিহাসে কলিঙ্গ যুদ্ধ এক যুগান্তকারী ঘটনা। অঙ্গরাজ্য বিজয়ের দ্বারা বিম্বিসার মগধের রাজ্য বিস্তার নীতির যে সূচনা করেছিলেন, কলিঙ্গ যুদ্ধের দ্বারা সেই সাম্রাজ্যবাদী নীতির পরিসমাপ্তি ঘটে এবং এর পরিবর্তে মগধের ইতিহাসে সাম্য, মৈত্রী, সামাজিক প্রগতি ও ধর্ম প্রচারের এক নতুন যুগের সূত্রপাত হয়। ডঃ রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় বলছেন যে, কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলে অশোকের ব্যক্তিজীবন এবং মগধের আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন দেখা দেয়। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে তিনি চিরদিনের মত যুদ্ধনীতি ত্যাগ করেন এবং সাম্য, মৈত্রী, প্রেম ও ভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করতে থাকেন। যুদ্ধ দ্বারা পররাজ্য গ্রাস না করে প্রেমের দ্বারা অন্যের হৃদয় জয় করাই তাঁর লক্ষ্যে পরিণত হয়। তিনি ‘ভেরী ঘোষ’-কে ‘ধর্মঘোষ’-এ পরিণত করেন।
ঐতিহাসিক ডঃ রোমিলা থাপার মনে করেন যে, কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলে অশোক কখনই একজন নিছক শান্তিবাদীতে পরিণত হননি বা তাঁর মতাদর্শের কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি। এ ধরনের কিছু হলে তিনি নিশ্চয়ই কলিঙ্গ রাজ্যের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতেন এবং বিদ্রোহী ও যুদ্ধবন্দীদের ক্ষমা করতেন বা সেনাদল ভেঙ্গে দিতেন। আসলে কলিঙ্গ যুদ্ধের পর তিনি অহিংস নীতি গ্রহণ করেছিলেন এই কারণে যে, তাঁর সাম্রাজ্য তখন চারিদিকেই নিরাপদ ছিল—আর যুদ্ধের কোন প্রয়োজন ছিল না। রুশ গবেষক বনগার্ড লেভিন বলেন যে, “কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক এক স্বপ্নবিলাসী, আদর্শবাদী অহিংস শাসকে পরিণত হন বলে মনে করার কোন কারণ নেই। তিনি কোন কিছুতেই ঐক্যবদ্ধ সাম্রাজ্য স্থাপনের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন নি।