ভারতে স্থায়ীভাবে কোন সাম্রাজ্য স্থাপন করা সুলতান মামুদের উদ্দেশ্য ছিল না এবং তা তাঁর পক্ষে সম্ভবও ছিল না। কেবলমাত্র পাঞ্জাব ও মুলতান তিনি স্বীয় সাম্রাজ্যভুক্ত করেছিলেন এবং এর ফলে ভারতে মুসলিম প্রভুত্ব স্থাপনের পথ সুগম হয়। তাঁকে নিঃসন্দেহে মহম্মদ ঘুরীর পথপ্রদর্শক বলা যায়। তাঁর বারংবার আক্রমণের ফলে ভারতের অপরিমিত সম্পদ লুণ্ঠিত হয় এবং সবই দেশের বাইরে চলে যায়—যা আর কখনও ফিরে আসে নি। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভূত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধে ভারতীয় যোদ্ধাদের অধিকাংশ বিনষ্ট হয় এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। এইভাবে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিক্ষয়ের ফলে পরবর্তীকালে হিন্দুদের পক্ষে তুর্কী আক্রমণ প্রতিরোধ করার শক্তি হ্রাস পায় এবং মহম্মদ ঘুরীর আগমন সহজতর হয়ে ওঠে।
সুলতান মামুদের আক্রমণের ফলে ভারতে অনেক মুসলিম বণিক ও ব্যবসায়ীর আগমন হয় এবং তাদের মাধ্যমে মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার সংগে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়, যা উত্তর ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করে। তুর্কী আক্রমণের সূত্রেই এদেশে সুফী সাধকদের আগমন ঘটে—যাঁরা হিন্দু-মুসলিম উভয়ের মধ্যে প্রেম, ভক্তি ও মৈত্রীর আদর্শ প্রচার করে হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ের পথ তৈরী করেন।
তথ্য সূত্র:
১. স্বদেশ পরিচয় - জীবন মুখোপাধ্যায়।