অশোকের কলিঙ্গ যুদ্ধের কারণ | কলিঙ্গ যুদ্ধ | Cause of Kalinga War


 অশোকের কলিঙ্গ যুদ্ধের কারণ | কলিঙ্গ যুদ্ধ

ভূমিকা:

বিন্দুসারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মগধের সিংহাসনে বসেন। কেবলমাত্র মৌর্য বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাটই নন—তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের সর্বকালের সর্বদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নরপতি। বৌদ্ধগ্রন্থ ‘দিব্যবদান’ ও সিংহলী গ্রন্থ ‘মহাবংশ’-তে লিখিত আছে যে, সিংহাসন লাভের জন্য অশোককে এক গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হতে হয় এবং তিনি তাঁর নিরানব্বই জন ভ্রাতাকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন। এই কারণে তাঁকে ‘চণ্ডাশোক’ বলা হত। বলা হয় যে, এই গৃহযুদ্ধের কারণেই তাঁর সিংহাসন লাভের চার বছর পর তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। আধুনিক ঐতিহাসিকরা ভ্রাতৃহত্যার এই বর্ণনাকে নিছক কল্প-কাহিনী বলে মনে করেন। তবে একথা ঠিকই যে, তাঁর সিংহাসন লাভের চার বছর পর তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়। রাজসিংহাসন নিয়ে বিরোধই হয়তো এর কারণ, কিন্তু ভ্রাতৃহত্যার এই বিবরণটি ঠিক নয়।


কলিঙ্গ যুদ্ধ ও তার কারণ:

অশোকের রাজ্যাভিষেকের নবম বর্ষ (মতান্তরে অষ্টম) ২৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে (মতান্তরে ২৬১ খ্রিঃ পূঃ) তিনি বাংলার সুবর্ণরেখা নদী থেকে গোদাবরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানে অবস্থিত বর্তমান উড়িষ্যা ও অন্ধ্রের কিছু নিয়ে গঠিত কলিঙ্গ অংশ রাজ্য জয় করেন। 


এই যুদ্ধের পশ্চাতে নানা কারণ বিদ্যমান ছিল। নন্দবংশের আমলে কলিঙ্গ মগধের অধীনে ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে তা স্বাধীনতা ঘোষণা করে দাক্ষিণাত্যের চোল ও পাণ্ড্য রাজাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে এক শক্তিজোট গঠন করে এবং সামরিক বলে প্রবলভাবে বলীয়ান হয়ে ওঠে। কলিঙ্গ রাজ্য দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার জলপথ ও স্থলপথ নিয়ন্ত্রিত করত। 


এছাড়া, মগধের সামুদ্রিক বাণিজ্য তখন তাম্রলিপ্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরের পথে ব্রহ্মদেশ, সুমাত্রা, জাভা প্রভৃতি অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল। কলিঙ্গ ছিল মগধের এই সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। সুতরাং এইসব নানা কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীন কলিঙ্গ রাজ্যের উপস্থিতি মগধের পক্ষে হানিকর ছিল। বলা বাহুল্য, এই যুদ্ধে কলিঙ্গ সম্পত্তির অপচয় ঘটে।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×