পাট্টা ও কবুলিয়ত বলতে কী বোঝ | Kabuliyat and Patta

পাট্টা ও কবুলিয়ত বলতে কী বোঝ | Kabuliyat and Patta

 পাট্টা ও কবুলিয়ত বলতে কী বোঝ | Kabuliyat and Patta


মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে একজন অন্যতম শাসক ছিলেন শের শাহ। কেবলমাত্র শাসক হিসেবেই নয় একজন প্রজাহিতৈষী সংগঠক হিসেবেও তিনি ভারত ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর শাসন কার্যের মূল লক্ষ্য ছিল প্রজাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলসাধন করা। মাত্র ৫ বছরের রাজত্বকালে শের শাহ যে শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তার অন্যতম অঙ্গ ছিল ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা। 


মূলত সরকারের আয় বৃদ্ধি ও প্রজাস্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যেই শেরশাহ রাজস্ব ব্যবস্থাকে এক সরল ও সুষ্ঠু রূপদান করেছিলেন। শেরশাহ প্রবর্তিত ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা র দুটি গুরুত্বপূর্ন দলিল ছিল 'পাট্টা' ও 'কবুলিয়ত '।


জমি ভোগদখলের অধিকার ও সরকারি রাজস্ব প্রদানের দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে শের শাহ আইনগত ভিত্তি দানের চেষ্টা করেন। সম্ভবত তিনিই ছিলেন মধ্যযুগে বিশ্বের প্রথম শাসক যিনি জমির উপর কৃষকের আবাদী-অধিকারটিকেও আইনগত নিরাপত্তা দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। প্রজাদরদী শাসক শের শাহ উপলব্ধি করেছিলেন যে কর্তব্যের দায়বদ্ধতা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা ব্যতীত কৃষকদের শ্রমের সুফল রাষ্ট্র ভোগ করতে পারবে না। 


তাই তিনি কৃষকের চাষ করা জমির ওপর তার অধিকার সুনিশ্চিত করা এবং সরকারকে ভূমি-রাজস্ব প্রদান সম্পর্কে কৃষকের দায়বদ্ধতা স্পষ্ট করার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেন। এজন্য তিনি ‘পাট্টা’ ও ‘কবুলিয়ৎ’-এর প্রচলন করেন।


জমিতে কৃষকের অধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার জমি জরিপের ভিত্তিতে কৃষকের অধীন জমির পরিমাণ, দাগ নম্বর, রায়তের নাম ইত্যাদি নথিবদ্ধ করে এবং নির্দিষ্ট জমিতে কৃষকের অধিকার স্বীকার করে নিয়ে চাষীকে একটি ‘পাট্টা’ (Title deed) প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। পরিবর্তে কৃষকও উক্ত জমিতে চাষাবাদ করা এবং সরকারকে ধার্য রাজস্ব প্রদান করার দায় কবুল করে একটি অঙ্গীকার পত্র বা ‘কবুলিয়ত্’ জমা দিতে বাধ্য থাকে। 


ভূমি-রাজস্ব ছাড়াও কৃষকদের দু’একটি অতিরিক্ত ‘সেস্’ দিতে বলা হয়। যেমন—‘জরিবানা’ বা জমি পরিমাপকের মজুরী, ‘মুহসিলানা’ বা রাজস্ব আদায়কারীর পারিশ্রমিক ইত্যাদি। সাধারণভাবে রাজস্বের ২.৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হারে ধার্য করা হত।


স্যার উইলসি হেগ শেরশাহকে মুসলমান শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর স্বল্প রাজত্বকালে শাসনব্যস্থা তথা ভূমি রাজস্ব সংস্কারের ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণ তাঁর ভূস্বয়ী প্রশংসা করেছেন। 


সম্রাট ও চাষির পরস্পরের অধিকার ও কর্তব্য সুনিশ্চিত করতেই তিনি 'পাট্টা' ও 'কবুলিয়ত ' ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। এর মাধ্যমে প্রকৃত অর্থেই শেরশাহ আধুনিক রাজস্ব ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন। এই ব্যবস্থার ফলে সরকার ও কৃষক উভয়ের স্বার্থই সুরক্ষিত হয়েছিল।


তথ্য সূত্র:

১. মুঘল রাজ থেকে কোম্পানি রাজ- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ী।

২. মাধ্যমিক ইতিহাস শিক্ষক- জি. কে. পাহাড়ী।

৩. স্বদেশ পরিচয়- জীবন মুখোপাধ্যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×